শুক্রবার বিকেল থেকে শুরু বৃষ্টি। তারপর মাঝে একটু বিরাম। ফের শুরু রাতে। যা চলল শনিবার বেলা পর্যন্ত। তারপরও বৃষ্টি হল বটে। তবে তা ঝিরঝির করে। ততক্ষণে অবশ্য শহর জলের তলায় চলে গেছে। বাঁচোয়া একটাই। দিনটা শনিবার। অনেকের ছুটি। অথবা হাফ ছুটি। প্রবল বৃষ্টির জন্য অনেকে ক্যাজুয়াল লিভ নিয়েছেন। সব মিলিয়ে শহর জুড়ে একটা বড় অংশ এদিন ছিল বাড়িতে।
ছুটির দিন, বাড়িতে থাকা অবস্থায় যে কোনও বৃষ্টিই আনন্দের। আর বঙ্গ জীবনে এমন তোফা দিনের উদযাপনটা ঠিকঠাক হয় রসনা তৃপ্তির মধ্যে দিয়েই। ফলে সকালে অনেকে বৃষ্টি মাথায় করেই বেরিয়েছিলেন ইলিশ খুঁজতে। অনেকে মাছের ডিম। কেউ বেরিয়েছিলেন আবার মাংস কিনতে। আর যাঁদের বাড়িতেই মজুত ছিল এসব তাঁরা স্রেফ টিভির পর্দায় চোখ রেখেছিলেন শহরের হাল দেখতে। আর নাকে ভেসে এসেছে নানা পদের গন্ধ। বাঙালির অবশ্য বৃষ্টির দিন মানেই আদি অনন্ত ভালবাসা উথলে ওঠে খিচুড়িতে। খিচুড়ির সঙ্গে কেউ পছন্দ করেন ইলিশ মাছ ভাজা, কেউ বেগুনি, কেউ পাঁপরভাজা।
শনিবার বেলা বাড়লে তাই অনেকের বাড়িতেই বড় হাঁড়িতে বসেছে খিচুড়ি। সঙ্গে গোলা হয়েছে বেসন। তাতে হাবুডুবু খেয়েছে পাতলা করে কাটা বেগুন, আলু, পটল। দুপুরে ধোঁয়া ওঠা পাত ভর্তি খিচুড়ির সঙ্গে এসব ভাজা একে একে হাজির হয়েছে পাতের আশপাশে। অনেকের বাড়িতে আবার এই ভরা বর্ষায় খিচুড়ি জমে উঠেছে ইলিশ ভাজার সঙ্গে। কেউ মাছের ডিমের বড়া আর খিচুড়িতে মন ভরিয়েছেন। খিচুড়ির সঙ্গে আর এক উপাদেয় পদ হল ডিমের অমলেট। তাও বাদ যায়নি এদিন।
বৃষ্টির দিনে কষা মাংসও মন্দ যায়না। আর তা যদি পাঁঠার হয় তাহলে তো কথাই নেই। তবে পাঁঠার মাংসের সঙ্গে ভাতেই জমেছে পাতা। খিচুড়িটা ঠিক পাঁঠার মাংসের সঙ্গে যায়না। কারও বাড়িতে আবার জমিয়ে পেঁয়াজি ভাজা হয়েছে। খিচুড়ির সঙ্গে দারুণ যায় এই পদটি। আসলে বাঙালি আর বৃষ্টিকে যদি কেউ সুতো দিয়ে জুড়ে দিতে পারে তবে সেই যোগসূত্রটি হল খিচুড়ি। কোথাও লেখা নেই। কিন্তু এও যেন চিরন্তন প্রথা।
বৃষ্টি হবে দিনভর। থাকবে ছুটি। আর খিচুড়ি হবেনা। তাহলে আবার বাঙালি হলেন কোথায়! শোনা যায় বিদেশে থাকা বাঙালিরাও নাকি সেখানে বৃষ্টি হলে বাড়িতে খিচুড়ি বসান। তাহলেই বুঝুন, খাস কলকাতায় ভরা বর্ষার শনিবার বিভিন্ন বাড়ি থেকে খিচুড়ির গন্ধ ভেসে আসবেনা কেন! কবি তো বলেই গেলেন, বাসনার সেরা বাসা রসনা। আর বাঙালির রসনা জ্ঞান নিয়ে নিশ্চয়ই কাউকে নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখেনা।