বউবাজারের বহু পরিবার এখন হোটেলে। তাঁদের ভিটে ছেড়ে তাঁরা এখন আতান্তরে। কিন্তু কিছু করারও নেই। যে কোনও মুহুর্তে বাড়ি বসে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাঁদের এত কম সময়ের মধ্যে বাড়ি থেকে বার করে আনা হয় যে অনেকেই বাড়ির জিনিসপত্র গুছিয়ে নিতে পারেননি। বিশেষত মূল্যবান সামগ্রি। যেমন বাড়ির দলিল, অলঙ্কার, টাকাকড়ি, ব্যাঙ্কের কাগজপত্র, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাগজ এবং এমন নানা অতি প্রয়োজনীয় সামগ্রি। এমনকি ঠাকুর ঘরে ঠাকুরকে একলা রেখেই বাড়ি ছেড়েছিলেন তাঁরা। হোটেলে ওঠার পর থেকেই তাঁরা বারবার দাবি জানিয়েছেন তাঁদের বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হোক। সেখান থেকে তাঁরা তাঁদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে আসবেন। কিন্তু ঝুঁকি নিতে রাজি হচ্ছিল না পুলিশ।
গত বৃহস্পতিবার ১০ মিনিটের জন্য কাউকে কাউকে তাঁদের বাড়িতে ঢুকতে দেয় পুলিশ। তাঁদের অবশ্য দাবি কার্যত ঝগড়া করে তাঁরা এই অনুমতি যোগাড় করেছেন। এরপর শুক্রবার সকালে স্যাকরা পাড়া লেন, গৌর দে লেনে ভিড় জমে যায়। পুলিশের তরফেই সেখানকার বাড়ি ছাড়া বাসিন্দাদের ১৫ মিনিট করে বরাদ্দ করা হয়। তাঁদের লোক সঙ্গে থাকবেন। তাঁরা প্রথমে নিশ্চিত হবেন বাড়ির কোন অংশে যাওয়া যাবে। তারপর বাসিন্দাদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে। আলো দেখাবেন তাঁরা। আর মানুষজনকে গুছিয়ে নিতে হবে তাঁদের প্রয়োজনীয় জিনিস। মাত্র ১৫ মিনিটে যতটা সম্ভব গুটিয়ে নিতে হবে তাঁদের।
এটাও এখন বড় সুযোগ তাঁদের জন্য। তাই শুক্রবার সকাল থেকেই স্যাকরা পাড়া লেন, গৌর দে লেনে ভিড়ে ভিড় জমে যায়। লাইন করে সকলে ঢুকতে থাকেন নিজের নিজের বাড়িতে। যতটা সম্ভব প্রয়োজনীয় সামগ্রি গুটিয়ে বেরিয়ে আসেন তাঁরা। অধিকাংশ মানুষই হোটেলে রয়েছেন। তাই সেখানে এসব রাখার উপায় না থাকায় এখান থেকে মালপত্র বার করে যে যার আত্মীয় পরিজনের বাড়িতে ছোটেন সেসব রাখতে। ফের ফেরত আসতে হবে তাঁদের। বাড়ি ছাড়া হলে কী হবে। মন তো বাড়িতেই পড়ে আছে। সারাদিনে বাড়ির গলিটার দিকে চেয়েই কেটে যাচ্ছে অনেকের। কবে তাঁরা নিজেদের সেই বড্ড চেনা ঘরগুলোয় ফের আগের মত থাকবেন সেই চিন্তা এখন কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে তাঁদের।