সিঁথির মোড় থেকে বাসে উঠেছিলেন অনিরুদ্ধবাবু। গন্তব্য রাজাবাজার। টালা ব্রিজের ওপর দিয়ে যেতে এতদিন লাগত মোটামুটি ৪০ মিনিট। বাসও ছিল অনেক। ২৩৪, ২৩০, ৩৪সি, কে-৪ এবং আরও অনেক বাস। ফলে যেদিন যেটা পেতেন উঠে পড়তেন। কর্মস্থলে পৌঁছে যেতেন ৪৫ মিনিটের মধ্যে। সেই অনিরুদ্ধবাবু ২ অক্টোবরে ছুটির দিন সকালে বাসে উঠে কার্যত দুপুরে পৌঁছলেন গন্তব্য। পাক্কা আড়াইটি ঘণ্টা সময় লাগল।
২৩৪ নম্বর বাসে উঠেছিলেন। সেই বাস চিড়িয়া মোড় হয়ে দমদম রোড হয়ে নাগেরবাজার। সেখান থেকে ডান দিকে বেঁকে প্রবল যানজট অতিক্রম করে কোনওক্রমে পৌঁছয় লেকটাউন-যশোর রোড মোড়। তারপর সেখান থেকে বেঁকে লেকটাউন ভিআইপি পৌঁছয় আরও ৪৫ মিনিট সময় নিয়ে। সেখান থেকে ভিআইপি হয়ে, হাডকো হয়ে, কাঁকুড়গাছি হয়ে ফুলবাগান দিয়ে নারকেলডাঙা মেন রোড ধরে পৌঁছয় রাজাবাজার। বাসে বসে থেকেই দুপুর হয়ে যায় তাঁর। তারওপর বাসের কন্ডাক্টর ঘোষণাই করে দিলেন এত তেল পুড়িয়ে যাতায়াত সম্ভব হচ্ছেনা। ফলে বাস কমে যাওয়ার একটা চিন্তাও পেয়ে বসেছে। ২৩৪ বাসটিকে নাকি রুট দেওয়া হয়েছে নাগেরবাজার থেকে এয়ারপোর্ট হয়ে ভিআইপি, বাইপাস হয়ে রুবি। তাহলে শ্যামবাজার থেকে শিয়ালদহ, মৌলালি, মল্লিকবাজার যাওয়ার উপায় কী?
এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এমনই পরিস্থিতি উত্তরের টালা ব্রিজের ওপারে বসবাসরত হাজার হাজার মানুষের। কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না কীভাবে পৌঁছবেন গন্তব্যে। ক্ষোভও রয়েছে। রুটই ঠিকঠাক না করে সবচেয়ে ছোট রুটে কীভাবে বাস নিয়ে যাওয়া যায় তার চিন্তা না করেই পুজোর মুখে এভাবে টালা ব্রিজ বন্ধ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। যদিও এটাও মানছেন যে বিশেষজ্ঞেরা যখন বলছেন ব্রিজের হাল খারাপ তখন সেখানে বাস না চালানোই ভাল। কিন্তু এটা আগে ভাবা হল না কেন? কেনই বা রুট দ্রুত ঠিকঠাক করা হল না।
অনেকে চিড়িয়ামোড়ে নেমে হাঁটা লাগাচ্ছেন। আবার শ্যামবাজার থেকে বাস ধরছেন। কিন্তু তা সকলের পক্ষে সম্ভব নয়। সমস্যা হচ্ছে হাসপাতাল থেকে স্কুল, কলেজ পৌঁছতে। অফিসে সময়ে পৌঁছনোর জন্য ঠিক কটায় বাড়ি থেকে বার হলে ভাল হয় সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন না মানুষজন। ঠাকুর দেখতে যাওয়ার কথা এখন মাথাতেই নিচ্ছেন না কেউ। চিন্তা এখন আগামী দিনে যাতায়াত নিয়ে।