কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে ওয়েলিংটন স্কোয়ার। পুজো পার করলেই এখানেই ফুটপাথের ধার ধরে তৈরি হয় অস্থায়ী স্টল। সেখানে গরম পোশাকের পসরা নিয়ে হাজির হন দার্জিলিং, সিকিম থেকে মানুষজন। এঁরা সকলেই শহরবাসীর কাছে ভুটিয়া। আর ভুটিয়াদের কাছ থেকে গরম পোশাক কেনার ঝোঁক এ শহরের নতুন নয়। এবার হেমন্তের দিনগুলোতে হৈমন্তী হাওয়ায় শীতের পরশ তেমন ছুঁয়ে যায়নি শহরবাসীকে। অনেকেই সন্দেহে ছিলেন এসব এল নিনো, বিশ্ব উষ্ণায়ন নামক শব্দগুলো বোধহয় এবার শহরের কটা দিনের শীতের সুখটুকুও চুরি করে নিয়ে যাবে! তাই কেউই গরম পোশাক কেনার রাস্তায় হাঁটেননি। কী হবে কিনে! যদি গায়েই সেভাবে চড়ানো না গেল!
শহরবাসীর সেই দোলাচল কাটিয়ে দিয়েছে পয়লা পৌষ। পয়লা পৌষ থেকেই শহরে জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়েছে। কিছুটা হুট করেই। ধাপে দাপে নয়, পারদ নেমেছে লাফ দিয়ে। আর শীত পড়তেই সময় নষ্ট না করে শহরবাসী ভিড় জমাতে শুরু করেছেন ওয়েলিংটনের ভুটিয়াদের গরম পোশাকের স্টলে। গত এক মাস যাবত যেখানে কার্যত মাছি তাড়িয়ে কেটেছিল এখানকার গরম পোশাক বিক্রেতাদের। সেখানে মাত্র কটা দিনেই তাঁরা দম ফেলার সময় পাচ্ছেন না।
শীত তো এ শহরে ক্ষণিকের অতিথি। কদিন থাকবে বলা মুশকিল। প্রতি বছরের অভিজ্ঞতা শহরবাসীকে এটা বুঝিয়ে দিয়েছে মকরসংক্রান্তি গেল তো শহর থেকে শীতও পাততাড়ি গোটাল। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহের মধ্যে শহরে বেশ গরম পড়ে যায়। তাই যদি এবারও হয় তাহলে আর এক মাসও পুরো জাঁকিয়ে শীত উপভোগের সুযোগ নেই। সেকথা মাথায় রেখে তাই আর দেরি করতে চাইছেন না কেউই। শাল, সোয়েটার, জ্যাকেট, কার্ডিগান, মাফলার, টুপি যা শীতের রংবাহারি পোশাক হয় তা দ্রুত কিনে গায়ে চড়াতে চাইছেন তাঁরা। আর দেরি করলে কেনাটাই যে বৃথা হতে পারে। শীত ভ্যানিস হলে তো এসব পোশাক নতুনই ঢুকে পড়বে আলমারিতে। তারপর ফের ১ বছরের অপেক্ষা।
বিক্রিবাটা ভাল হওয়ায় ভুটিয়ারাও বেজায় খুশি। এই ব্যস্ততাটাই তো তাঁরা চাইছিলেন। দূর দূরান্ত থেকে এসব পসরা বয়ে এনে এখানে কষ্ট করে থেকে যদি কিছু লাভের মুখদর্শন না হয় তাহলে লাভ কি! আসাটাই তো বৃথা। তবে সে কষ্ট নিয়ে হয়তো তাঁদের এবার আর ফিরতে হচ্ছেনা। অন্তত ওয়েলিংটনে বিক্রিবাটার চেহারা সেটাই বলছে।