আইসোলেশনে থাকা ব্যক্তির ফ্ল্যাটে তালা ঝুলিয়ে দিলেন প্রতিবেশি
ফের চরম অমানবিকতা দেখল শহর। আইসোলেশনে থাকা এক ব্যক্তির ফ্ল্যাটের কোল্যাপসিবলে বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে দিলেন প্রতিবেশি যুবক।
কলকাতা : তাঁর মা গত সপ্তাহে করোনার শিকার হন। তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউ-তে আপাতত রয়েছেন তিনি। এদিকে মাকে ভর্তি করার পর নিয়ম মেনেই নিজেকে ১৪ দিনের জন্য আইসোলেশনে রাখতে ফ্ল্যাটেই ছিলেন ছেলে সজলকান্তি দাস। শুক্রবার সকালে তিনি দেখেন তাঁর ফ্ল্যাটের কোল্যাপসিবলে বাইরে থেকে তালা ঝুলছে। দ্রুত তিনি আবাসনের পরিচালন সমিতিকে বিষয়টি জানান। তাঁদের হোয়াটসঅ্যাপ করেন। কিন্তু অভিযোগ সব জানতে পেরেও কেউ সজলবাবুর ডাকে সাড়া দেননি। এমনকি আবাসনের সুরক্ষাকর্মীদেরও আসতে দেওয়া হয়নি।
এত ডেকেও কারও তরফ থেকে কোনও সাড়া না পেয়ে অবশেষে সজলবাবু বাগুইআটি থানায় ফোন করেন। ফোন পেয়ে বাগুইআটি থানার পুলিশ কেষ্টপুরের ঘোষপাড়ার চিত্রকূট ধাম অ্যাপার্টমেন্টে সজলবাবুর ফ্ল্যাটের সামনে হাজির হয়। এই আবাসনে সিসিটিভি রয়েছে। সেই সিসিটিভ ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখে তারা। তখনই পুলিশ দেখতে পায় সজলকান্তিবাবুর পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা এক যুবক দীপ সেনগুপ্ত রাতে এসে সজলকান্তিবাবুর ফ্ল্যাটের কোল্যাপসিবলে চুপিচুপি তালা ঝুলিয়ে চলে গেলেন।
পুলিশ সিসিটিভি পরীক্ষার পরই দীপকে ডেকে পাঠায়। তারপর তাঁকে তালা খোলার নির্দেশ দেয়। দরজা খোলা হলে মুক্তি পান সজলকান্তিবাবু। তবে পুলিশ প্রাথমিক জেরা করেছে দীপকে। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়নি। এমন অমানবিক আচরণ তাঁর সঙ্গে হওয়ায় মানসিকভাবে বিধ্বস্ত সজলকান্তিবাবু। তিনি লকডাউনে স্থানীয় দরিদ্রদের সাহায্য করেছিলেন বলে দাবি করেছেন। তার প্রতিদান এই অমানবিকতা বলে আক্ষেপ করেন সজলকান্তিবাবু।
মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলেছেন করোনা রোগীর থেকে সামাজিক দূরত্ব নয়, দৈহিক দূরত্ব বজায় রাখুন। করোনা রোগীকে দূরে ঠেলে দেবেন না। কিন্তু সেসব তোয়াক্কা না করে এমন এক চরম অমানবিক ঘটনার সাক্ষী হল শহর। মা হাসপাতালে করোনার সঙ্গে লড়াই করছেন। ছেলে নিজেকে সেলফ আইসোলেশনে রেখেছেন। তারপরেই তাঁদের ফ্ল্যাটে তালা ঝোলালেন প্রতিবেশি! সেকথা যখন ফ্ল্যাটের পরিচালন সমিতিকে জানালেন সজলবাবু তখন তার প্রতিকার না করে চুপ করে রইল সমিতি। এখানে এমন প্রশ্নও উঠছে যে তাহলে কী দীপ সেনগুপ্ত-র এই কাজে আসলে মদত ছিল পরিচালন সমিতির? প্রশ্ন কিন্তু উঠছে।