সকাল হতেই নেতাজির প্রিয় তেলেভাজার দোকানে লম্বা লাইন
প্রতি বছরের দৃশ্যটা এবারও একই রইল। উৎসাহে এতটুকু খামতি ধরা পড়েনি। নেতাজির জন্মদিবস উপলক্ষে তাঁর প্রিয় তেলেভাজার দোকানে ছিল লম্বা লাইন।
কলকাতা : বাঙালির রসনা তৃপ্তির একটি অন্যতম রসদ হল তেলেভাজা। গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সভা কি নিছক আড্ডার আসর – সবার হাতে এক মুঠো মুড়ি আর আঙ্গুলের ফাঁকে গরম চপটা বা বেগুনিটা ছাড়া জমবেই না।
তেলেভাজা প্রিয় বাঙালির তালিকায় নাম আছে বহু বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের। কখনও কখনও তাঁদের নামেই বিখ্যাত হয়ে যায় তাঁদের প্রিয় দোকানগুলি। তেমনই একটি দোকান হল উত্তর কলকাতার বিধান সরণিতে লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ এন্ড সন্স।
এই বিখ্যাত তেলেভাজার দোকানটি লোকমুখে পরিচিত ‘নেতাজির তেলেভাজা’ নামে। প্রতিবছর ২৩ জানুয়ারি নেতাজি জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে এ দোকান থেকে বিনামূল্যে সকলকে তেলেভাজা বিতরণ করা হয়। এ এক দীর্ঘদিনের প্রথা। ফলে ২৩ জানুয়ারির সকাল মানেই তেলেভাজা নিতে লক্ষ্মীনারায়ণের সামনে লম্বা লাইন। যার অন্যথা হল না শনিবারও।
অন্য বছরের তুলনায় এবছর আরও জাঁকজমক করে নেতাজির জন্মজয়ন্তী উদযাপিত হল লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ এন্ড সন্সে। আর মানুষ নিছক তেলেভাজা সংগ্রহের টানে নয়, লাইন দিলেন নেতাজি নামের আবেগটাকে আরও একবার ঝালিয়ে নিতে।
খেদু সাউ ১৯১৮ সালে তৎকালীন কর্নওয়ালিস স্ট্রিটের ওপর চালু করেন তাঁর তেলেভাজার দোকানটি। সেসময় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন স্কটিশ চার্চ কলেজের ছাত্র। তাঁর পছন্দের তেলেভাজার দোকান ছিল এটি।
পরে ১৯৪২ সালে খেদুবাবু নেতাজির সম্মানে প্রত্যেককে ২৩ জানুয়ারি, নেতাজির জন্মদিনের দিন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে তেলেভাজা খাওয়ানো শুরু করেন। সেই প্রথা বর্তমানে নেতাজির জন্মদিন উদযাপনের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
খেদু সাউ-এর নাতি মোহন সাউ হলেন ১০৩ বছরের পুরনো এই প্রসিদ্ধ প্রতিষ্ঠানের বর্তমান কর্ণধার। তাঁর কথায়, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন চলাকালীন নেতাজি ও তাঁর সহযোগী বিপ্লবী নেতারা যখন ওই অঞ্চলে তাঁদের গুপ্ত সভার আয়োজন করতেন, তখন খেদুবাবু প্রায়ই তাঁর দোকান থেকে তাঁদের লোভনীয় তেলেভাজা যোগান দিয়ে যেতেন।
সারা রাজ্য তথা দেশ যেমন এই বিশেষ দিনটি উদযাপন করার জন্য মেতে উঠেছে তেমনই নেতাজির স্মৃতিকে বুকে নিয়ে চলা শতাব্দী প্রাচীন এই তেলেভাজার দোকানটিও পিছিয়ে নেই।
দোকানের সামনে নেতাজির আবক্ষ মূর্তিকে অপরূপ সাজে এদিন সাজিয়ে তোলা হয়েছিল। সাজানো হয়েছিল দোকানকেও। সকাল থেকেই তেলেভাজা তৈরির আয়োজন ছিল তুঙ্গে।
এদিকে রাস্তায় ক্রমে লাইন দীর্ঘ হচ্ছিল। তেলেভাজা সংগ্রহের লাইন। অধিকাংশ মানুষই আশপাশের বাসিন্দা। প্রতি বছরের অভ্যাস। নেতাজির জন্মদিবসে এই দোকান থেকে তেলেভাজা সংগ্রহ তাঁদের কাছে নেতাজি জন্মদিবস পালনের একটা অঙ্গ হয়ে উঠেছে। নজর কাড়ল অনেক বয়স্ক মানুষের লাইন দেওয়া।
এ দোকানে প্রতিবছরের মত বিনামূল্যে তেলেভাজা বিতরণ পর্ব শুরু হয়ে যায় খুব সকাল থেকেই। বেলা একটু বাড়তে সামনের ফুটপাথে দাঁড়ানো লাইন ধীরে ধীরে লম্বা হতে থাকে।
দোকানের বিশাল লোহার কড়াইয়ের গরম তেলের ভিতর থেকে সামনের ঝুড়িতে তেলেভাজা পড়লেই তা সঙ্গে সঙ্গে ঠোঙায় ভরে চালান হয়ে যাচ্ছিল অপেক্ষমাণ মানুষের হাতে হাতে। সেই ঠোঙা হাতে এই বিশেষ দিনটি নেতাজির প্রিয় তেলেভাজার উষ্ণ স্বাদে উদযাপন করলেন শহরবাসী।