রাত তখন প্রায় পৌনে ৩টে। পাতিপুকুরের রেললাইনের ধার ধরে সুভাষ কলোনি তখন লেপের তলায় ঘুমিয়ে কাদা। এমন সময়ে আগুনের লেলিহান শিখায় ঘুম ভাঙে কয়েকজনের। মাথার ওপর চাল জ্বলছে দাউদাউ করে। ধড়ফরিয়ে বিছানায় উঠে বসে সকলকে ডাকার অপেক্ষা। তারপরই যে যারমত আগুন আগুন বলে চিৎকার করতে করতে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে আসেন। আগুন যে গতিতে ছড়াচ্ছিল তখন আর প্রয়োজনীয় জিনিস বার করার সময়টুকুও নেই। প্রাণ বাঁচিয়ে বার হতে পারলেই অনেক কিছু। রাতেই রেললাইনের ওপর খোলা আকাশের নিচে স্থান হয় সুভাষ কলোনির বাসিন্দাদের। চোখের সামনে তখন ভয়ংকর আগুনে শেষ হয়ে যাচ্ছে সাধের গৃহকোণটুকু। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। ভেজা চোখে সকলে দেখলেন আস্তে আস্তে ছাই হয়ে গেল তাঁদের সাজানো সংসার। দমকল আসে দ্রুতই। কিন্তু ঝুপড়িতে আগুন ছড়ায় আরও দ্রুত। ফলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সহজ ছিলনা। অপরিসর এলাকায় দমকলের কাজ করতেও বেগ পেতে হয়। দমকলের ১৬টি ইঞ্জিন প্রায় ৫ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু তখন আর কিছু পড়ে নেই। শেষ সম্বলটুকুও পুড়ে কালো ছাইয়ে পরিণত হয়েছে। খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর চোখের সামনে উদ্ধার হয় দুটি দগ্ধ দেহ। পরে ঘটনাস্থলে আসেন স্থানীয় কাউন্সিলর শান্তনু সেন। কলকাতা পুরসভার তরফ থেকে এই সবহারানো মানুষজনকে সবরকম সাহায্য দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি। স্থানীয় ২টি স্কুলে তাঁদের অস্থায়ী থাকার বন্দোবস্ত করে দেওয়া হবে বলেও জানান শান্তনুবাবু। এদিকে এদিন সকাল গড়িয়ে দুপুর। তখনও চোখের জল বাঁধ মানছে না সদ্য ঘর হারানো মানুষগুলোর। তখনও ছাইয়ের গাদায় তাঁদের কয়েকজন খুঁজে দেখছেন। যদি শেষ পর্যন্ত সামান্য কিছুও বেঁচে গিয়ে থাকে!