Kolkata

রোগীমৃত্যু ঘিরে বিতর্কে অ্যাপোলো

মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারির পর ৪৮ ঘণ্টাও কাটার সময় পেল না। ফের শহরে মুমূর্ষু রোগীকে আটকে বিল মেটানোর জন্য রোগীর পরিবারকে চাপ দেওয়ার অভিযোগ উঠল অ্যাপোলোর বিরুদ্ধে। রোগীর পরিবারের দাবি, মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে থাকা রোগীকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার আগে যেভাবে বিল মেটানোর জন্য চাপ তৈরি করা হল তাঁদের ওপর তাতে অনেকটাই সময় নষ্ট হয়। হাসপাতালের সব দাবিদাওয়া মিটিয়ে ‌এসএসকেএমে নিয়ে যেতেই দেরি হয়ে যায় তাঁদের। ‌যারফলে রোগীকে আর বাঁচানো যায়নি। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, রোগী মৃত্যুর কারণ কখনই দেরি হওয়া নয়। এসএসকেএমের বেড পর্যন্ত রোগীকে ছেড়ে আসা অব্ধি তাঁদের চিকিৎসকেরা রোগীর সঙ্গে ছিলেন। তবে সেকথা মানতে নারাজ রোগীর পরিবার। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ডানকুনির বাসিন্দা সঞ্জয় রায় বাইকে আসার সময় শলপের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। দ্রুত তাঁকে অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালের চিকিৎসকদের দাবি, সেই সময়ে তাঁর পেটে চোট ছিল, লিভারে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল, চোট ছিল কিডনিতেও। তবে রোগীর জ্ঞান ছিল। এই অবস্থায় সিটি স্ক্যান করা হয়। পরে তাঁর রক্তক্ষরণ বন্ধও করা হয়। রাখা হয় ভেন্টিলেশনে। এরপর মিটার চড়ার মত বাড়তে থাকে হাসপাতালের বিল। রোগীর পরিবারের দাবি, রোগীর সঠিক অবস্থা তাঁদের জানানও হচ্ছিল না। অবশেষে ২৩ ফেব্রুয়ারি সঞ্জয় রায়ের পরিবারের তরফে এসএসকেএমে একটি বেড নিশ্চিত করে রোগীকে স্থানান্তরিত করতে চাওয়া হয়। বিকেলে তাঁরা সেকথা অ্যাপোলোকে জানান। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ এরপর ৭ লক্ষ ২৩ হাজার টাকার বিশাল বিলের অঙ্কের কিছু টাকা বাকি থাকায় রোগীকে ছাড়তে রাজি হচ্ছিল না অ্যাপোলো। অবশেষে চেক থেকে শুরু করে নিজেদের ফিক্সড ডিপোজিটের কাগজ পর্যন্ত হাসপাতালে জমা দিলে রোগী ছাড়ে তারা। কিন্তু এসব করতে করতে রাত হয়ে যায়। এসএসকেএমে যখন রোগী পৌঁছয় তখন চিকিৎসকেরা জানান তখন অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে। রোগীর পরিবারের দাবি, বিল নিয়ে এভাবে রোগীকে না আটকালে এসএসকেএমে সময়ে পৌঁছনো যেত। হয়তো বাঁচানো যেত তাঁদের পরিজনকে। এই ঘটনা কানে যেতে প্রকাশ্যেই অ্যাপোলো হাসপাতালকে একহাত নেন প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্র। ফোনে তিনি কড়া সুরেই জানতে চান এমন অমানবিক কাজ তারা করল কিভাবে? কেনই বা রোগী আটকে বিল মেটানোর জন্য চাপ দেওয়া হল রোগীর পরিবারের ওপর। কেন তাঁদের বাড়ির দলিল পর্যন্ত হাসপাতালে জমা রাখতে হল তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। মদনবাবুর দাবি, অ্যাপোলো নাকি প্রায়ই ভয় দেখায় তারা কলকাতা থেকে ব্যবসা গুটিয়ে অন্য রাজ্যে চলে যাবে। মদনবাবু এদিন সরাসরিই জানিয়ে দেন তারা যদি চলে যেতে চায় যেতে পারে। এতে রাজ্য সরকার খুশিই হবে। অ্যাপোলোয় যাওয়া শ্মশানে যাওয়ার সামিল হয়ে গেছে বলেও জানান তিনি। পরিস্কার ভাষায় জানিয়ে দেন রায় পরিবারকে বিলের পুরো টাকা অ্যাপোলোকে ফিরিয়ে দিতে হবে। আর সেই টাকা ফেরতের বিষয়টি কতটা কী এগোল তা তাঁকে ফোনে জানাতে হবে অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষকে। যদিও কোনও অভিযোগই মানতে চায়নি অ্যাপোলো। তাদের দাবি, চিকিৎসা হয়েছে ঠিকভাবেই। রোগী সুস্থও হচ্ছিলেন। তবে সময় লাগত। খুবই আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। পাশাপাশি তাদের দাবি কোনও চাপ তাদের তরফ থেকে পেশেন্ট পার্টির ওপর দেওয়া হয়নি। কোনও দলিল নেওয়া হয়নি। তবে এফডি-র কাগজ নেওয়ার কথা তারা স্বীকার করে নেয়। যদিও তাদের দাবি, ওই কাগজ তারা চায়নি, সঞ্জয় রায়ের বাড়ির লোকেরাই তাদের জোর করে দিয়ে গিয়েছে। সেকথা যদিও অস্বীকার করেছে সঞ্জয় রায়ের পরিবার। এমনকি রোগীকে রেখে ৮ দিনে ৭ লক্ষ ২৩ হাজার টাকার বিল বানানো হল, কিন্তু রোগীর উন্নতি হলনা কেন বা সেকথা তাঁদের পরিস্কার করে জানান হলনা কেন তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। শহরে বেসরকারি হাসপাতালের এই অস্বাভাবিক বিলের বোঝা নিয়ে আগেই মুখ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ার করেছিলেন। কিন্তু অ্যাপোলোর এদিনের ঘটনা ফের বোঝাল তাদের সিদ্ধান্তটা ঠিক কী! তবে মিডিয়ায় হাসপাতালের কীর্তিকলাপ সামনে আনা থেকে শুরু করে শহর জুড়ে ছিছিক্কার বা মদনবাবুর হুঁশিয়ারির পর পিঠ বাঁচাতে সঞ্জয় রায়ের জন্য করা বিলের সব টাকা তারা ফিরিয়ে দেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে অ্যাপোলো। তবে টাকা ফেরত পেলেও সঞ্জয়কে তো কোনওদিন ফেরত পাবেনা রায় পরিবার। তাঁর বাবাকে ফিরে পাবে না ২ বছরের সন্তান। এই ক্ষতি সত্যিই টাকা দিয়ে পূরণ করা যায়?

 



Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button