বামেদের নবান্ন অভিযান ঘিরে বেলা বাড়তেই শুরু হয়েছিল জমায়েত। রানি রাসমণি রোড, সাঁতরাগাছি, পিটিএস, খিদিরপুর ও হাওড়া রেল মিউজিয়াম থেকে মিছিল করা স্থির ছিল। ফলে সকাল থেকেই মাটাডোর, বাস, টেম্পো ভাড়া করে বিভিন্ন জায়গা থেকে বাম কর্মী সমর্থকরা বিভিন্ন পয়েন্টে জমা হতে থাকেন। সেখান থেকেই মিছিল শুরু হওয়ার কথা ছিল বেলা ১টায়। তৈরি ছিল পুলিশ। ত্রীস্তরীয় ব্যারিকেড সাজিয়ে মিছিলকারীদের রুখতে মোতায়েন ছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী, রোবোকপ। বেলা ১টায় ৫টি নির্ধারিত জায়গা থেকে মিছিল শুরু হয়। রানি রাসমণি রোডের মিছিলের নেতৃত্ব দেন বিমান বসু ও সূর্যকান্ত মিশ্র। মিছিল মেয়ো রোডে পৌঁছতেই ব্যারিকেডের সম্মুখীন হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় ব্যারিকেড বাঁশের। তা সহজেই ভেঙে বিক্ষোভকারীরা এগোতে থাকেন। কিন্তু তৃতীয় ব্যারিকেডে পৌঁছে তা ভাঙার চেষ্টা হতেই শুরু হয় খণ্ডযুদ্ধ। ইস্পাতের তৈরি ব্যারিকেড ভাঙতে বাঁশ, লাঠির সাহায্য নেন বিক্ষোভকারীরা। অন্যপারে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশকে লক্ষ করে শুরু হয় ইটবৃষ্টি। পাল্টা পুলিশ ওই ইটই ফিরিয়ে দিতে থাকে বিক্ষোভকারীদের দিকে। এদিকে ব্যারিকেড ভাঙতে গায়ের জোর, বাঁশের ধাক্কা সবই ব্যবহার করতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। আশপাশের মাঠের দিক দিয়েও ফাঁকফোকর গলে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন অনেকে। এদিকে ক্রমশ ভয়ংকর হতে থাকা জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। ফাটানো হয় কাঁদানে গ্যাসের শেল। ছত্রভঙ্গ অবস্থায় অনেকেই মাটিতে পড়ে যান। অনেক বৃদ্ধ ও মহিলাকে এদিন মিছিলে দেখা গিয়েছে। তাঁদের অনেকেই এই জ্যৈষ্ঠ মাসের তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পুলিশের লাঠির ঘাও পড়ে মহিলা ও বৃদ্ধ বিক্ষোভকারীদের ওপর। পাল্টা পুলিশের দিকেও তেড়ে যান অনেকে। এদিন শুধু মেয়ো রোডেই নয়, আর একটি মিছিল এগোনোর চেষ্টা করলে লেডি ডাফরিন রোডেও হুলুস্থুলু বেধে যায়। সেখানের ছবিটাও প্রায় একই রকম। সেখানেও কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হয়। চলে লাঠি। এদিন অনেক পুলিশ কর্মীও বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে বা তাঁদের ছোড়া ইটের ঘায়ে আহত হন। রক্তাক্ত হতে হয় পুলিশকে। হাওড়ার ব্যাতড়ে মিছিল আটকালে সেখানেও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধুন্ধুমার বাঁধে। এখানে প্রথমে বিক্ষোভকারীরা বাধা পেয়ে বসে পড়েন। পরে তাঁদের মধ্যে থেকেই পুলিশকে লক্ষ করে ব্যারিকেডের ওধারে ইট ও জলের বোতল ছোঁড়া হয়। এরপরই পাল্টা জলকামান দিয়ে বিক্ষোভকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা শুরু করে পুলিশ। অনেকেই জলকামানের তোড়ে উল্টো দিকে ছুট লাগান। তারমধ্যেই পুলিশ লাঠিচার্জ করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে থাকে। এখানেও রক্ত ঝরে দু’পক্ষের। একই পরিস্থিতি তৈরি হয় খিদিরপুরেও। ১৮ দফা দাবিতে বামেদের এই নবান্ন অভিযান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ধর্মতলায় বামেদের তরফে স্টেজ তৈরি করা হয়েছিল। সেখানেও পুলিশ লাঠিচার্জ করে সকলকে সরিয়ে দেয়। এদিন পুলিশের কারও মাথা ফেটেছে। কারও চোখে আঘাত লেগেছে। কারও পা থান ইট লেগে রক্তাক্ত। অন্যদিকে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জে অনেকেই আহত, রক্তাক্ত। অনেক মহিলা ও বৃদ্ধ রক্তাক্ত হয়েছেন। লাঠির ঘায়ে বড় ধরণের আঘাত পেয়েছেন। এদিকে মধ্য কলকাতা ও হাওড়ার শিবপুরের একটা বড় অংশ এদিন দুপুর থেকেই প্রবল যানজটের শিকার হয়। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে প্রবল গরমে বাসে বা গাড়িতে ঠায় বসে নাকাল হতে হয় আমজনতাকে। অনেকেই সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারেননি। সব মিলিয়ে দুপুর জুড়ে প্রবল গরমে বামেদের এই বিক্ষোভ কর্মসূচি শহরের তাপমাত্রা আরও কিছুটা বাড়িয়ে দিল সন্দেহ নেই।