Kolkata

বিজেপির লালবাজার অভিযানে বোমা, অগ্নিসংযোগ, পাল্টা পুলিশের লাঠিচার্জ

আশঙ্কা সত্যি করেই অগ্নিগর্ভ চেহারা নিল বিজেপির লালবাজার অভিযান। পড়ল বোমা, জ্বলল পুলিশের গাড়ি, ভাঙচুর হল ডিসি-র গাড়ি। ইটবৃষ্টি, জলের বোতল ছোঁড়া, লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস, জলকামানও বাদ গেল না। ঝরল রক্ত। ভাঙল হাত, পা। গ্রেফতার হলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা, বিজেপি সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়, বিজেপি নেতা লকেট চট্টোপাধ্যায়। পূর্ব ঘোষণা মত এদিন সকাল থেকেই বিজেপির লালবাজার অভিযান ঘিরে শহরে বিজেপি সমর্থকদের ভিড় বাড়তে থাকে। ৩টি জায়গা থেকে বিজেপির মিছিল এগোনোর ঠিক ছিল লালবাজার অভিমুখে। ধর্মতলার মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন রাহুল সিনহা, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। কলেজ স্কোয়ার থেকে মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়, মীনাদেবী পুরোহিত। হাওড়া থেকে মিছিলে ছিলেন দিলীপ ঘোষ, লকেট চট্টোপাধ্যায়। বেলা ১টায় হাওড়া স্টেশনের কাছ থেকে মিছিল এগোয়। বিভিন্ন ট্রেনে দূরদূরান্ত থেকে আসা বিজেপি সমর্থকেরা হাওড়া স্টেশন থেকে মিছিলে যোগ দেন। বিশাল মিছিল হাওড়া ব্রিজ হয়ে ব্রাবোর্ন রোডে পৌঁছয় বেলা ১টা ১০ নাগাদ। ব্রাবোর্ন রোডে টি বোর্ডের কাছে ত্রিস্তরীয় ব্যারিকেডের বন্দোবস্ত করেছিল পুলিশ। মিছিল শুরুতেই বাঁশের ব্যারিকেড ভেঙে এগোয়। পুলিশ তখন মাইকে তাদের ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করে চলেছে। পুলিশ বাহিনী তাদের বুঝিয়ে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। যদিও মিছিল এগোতে থাকে। কিছুটা এগিয়ে ইস্পাতের ব্যারিকেড। সেখানে পৌঁছে ব্যারিকেড সরানোর চেষ্টার সময় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় বিজেপি কর্মী সমর্থকদের। ঠিক এমন সময়েই ১টা ১৭ নাগাদ মিছিলের মধ্যেই বোমার শব্দ শোনা যায়। অভিযোগ মিছিলের মধ্যে থেকেই বোমা ছোঁড়া হয়। এরপরই পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। লাঠিচার্জের সঙ্গে সঙ্গে মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। ছোঁড়া হয় কাঁদানে গ্যাসের শেলও। এরপরই ক্রমশ পিছু হঠতে থাকেন বিজেপি সমর্থকেরা। বেশ কয়েকজন বিজেপি কর্মীকে রাস্তায় আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। গ্রেফতার হন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। ইস্পাতের ব্যারিকেডের কাছে পৌঁছে যাওয়া লকেট চট্টোপাধ্যায় অসুস্থ বোধ করায় তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁকে চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়। এদিকে ব্রাবোর্ন রোডে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে সমর্থ হলেও বিশাল পুলিশ বাহিনী ব্রাবোর্ন রোড ফ্লাইওভার পর্যন্ত পৌঁছে বিজেপি কর্মীদের হঠাতে থাকে। বেলা আড়াইটের পর অবস্থা অনেকটা আয়ত্তে আসে। আস্তে আস্তে শুরু হয় যান চলাচল।

ব্রাবোর্ন রোডে যখন পুলিশ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে ব্যস্ত তখন কলেজ স্ট্রিট থেকে দ্বিতীয় মিছিলটি কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের নেতৃত্বে বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট হয়ে পৌঁছয় ফিয়ার্স লেনের কাছে। ঘড়িতে তখন ১টা ৪০ মিনিট। ফিয়ার্স লেনে মিছিলের পথ আটকায় পুলিশ। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। কিছুক্ষণের মধ্যেই অবস্থা ঘোরালো হয়ে ওঠে। বিজেপি সমর্থকেরা পুলিশকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মত ইট ছুঁড়তে থাকেন। পাল্টা পুলিশও লাঠিচার্জ শুরু করে। শুরু হয় ধুন্ধুমার। গ্রেফতার হন কৈলাস বিজয়বর্গীয়। এদিকে পুলিশের লাঠিচার্জে পিছু হঠতে থাকেন বিজেপি সমর্থকেরা। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ ও বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের দিকে ছুটতে থাকেন বিজেপি সমর্থকেরা। পুলিশ পিছু ধাওয়া করে। এই সময় ফিরিঙ্গি কালীবাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিল আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার ওসির গাড়ি। সেই গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন বিজেপি সমর্থকেরা। ভাঙচুর করা হয় আশপাশের কিছু গাড়িও। রাস্তার দুধারে দোকানপাটে তখন শাটার নামানো। রাস্তা শুনশান। অতিব্যস্ত বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে তখন পুলিশ, সাংবাদিক আর বিজেপি সমর্থক ছাড়া আর কেউ নেই। এদিকে পুলিশের তাড়া খেয়ে অনেক বিজেপি সমর্থক সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশনের মধ্যে ঢুকে যান। সেখানেও পুলিশ তাঁদের পিছু ধাওয়া করে স্টেশনের সিঁড়ি বেয়ে অনেকটা নেমে যায়। স্টেশনের সিঁড়িতেও দু-চার ঘা লাঠি পড়ে বিজেপি কর্মী সমর্থকদের ওপর। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউতে যান চলাচল ততক্ষণে বন্ধ। পুলিশ তাড়া করে বিজেপি সমর্থকদের সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ ধরে মেডিক্যাল কলেজের দিকে পাঠিয়ে দেয়। অবস্থা ক্রমশ আয়ত্তে আসতে থাকে। পৌনে ৩টে নাগাদ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এনে ফেলে পুলিশ।
লালবাজার অভিমুখে বিজেপির তৃতীয় মিছিলটি ছিল ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেল থেকে। এই মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন রাহুল সিনহা ও রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। মিছিল শুরু হয়ে পৌনে ২টো নাগাদ প্রায় গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউ ও বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের সংযোগস্থলে পৌঁছলে সেখানে মিছিলের পথ আটকায় পুলিশ। সেখানে বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে কথাও বলতে শুরু করে পুলিশ। এখানে কিন্তু চিত্রটা ছিল আলাদা। পুলিশ ও মিছিলকারী, দু’দিকই স্নায়ুর যুদ্ধে নেমেছিল। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ চলার পর আচমকাই ওয়াটারলু স্ট্রিটের কাছে বোমার শব্দ পাওয়া যায়। শব্দ পাওয়ার পর পুলিশ আর থেমে থাকেনি। তার আগেই ব্রাবোর্ন রোডের খবর সকলের জানা ছিল। শুরু হয় পুলিশের লাঠিচার্জ। এরমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁকে রাস্তার ধারে একটি রকে বসানো হয়। রাহুল সিনহা রাস্তায় বসে অবস্থান শুরু করেন। এদিকে পুলিশের লাঠিচার্জে ছত্রভঙ্গ হতে থাকেন বিজেপি কর্মী সমর্থকেরা। গলিতে ঢুকেও লাঠিচার্জ করে পুলিশ। পরে রূপা গঙ্গোপাধ্যায় ও রাহুল সিনহাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অবস্থা স্বাভাবিক হতে হতে বিকেল হয়ে যায়। বিজেপির এদিনের লালবাজার অভিযানে যে বিজেপি কর্মীরা আহত হন তাঁদের অধিকাংশকেই মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়। এদিন পুলিশের বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁদেরও চিকিৎসা হয় মেডিক্যালে। এদিকে পুলিশ বিজেপি খণ্ডযুদ্ধের জেরে বড়বাজার থেকে ধর্মতলার কিছু অংশ, বিবাদী বাগ এলাকা ও বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েন। অনেক দোকান আতঙ্কে বন্ধ করে দেন মালিকরা। ক্রেতারা কেউ এদিন এ ধারেও আসেননি। সমস্যায় পড়েন আমজনতাও। বিস্তীর্ণ এলাকা যানজটের কবলে পড়ায় এই গরমে নাজেহাল হতে হয় তাঁদের। এই নিয়ে চলতি সপ্তাহে ২ দিন এমন চরম ভোগান্তির শিকার হলেন সাধারণ মানুষ।



Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button