Kolkata

গানস্যালুটে শেষশ্রদ্ধা, শেষকৃত্য পর্যন্ত অমিতাভ-র দেহ আগলে স্ত্রীর কান্না

মাত্র ৬ মাস হল বিয়ে হয়েছিল। শান্তির ব্যাঙ্কের চাকরি না করে বেছে নিয়েছিলেন পুলিশের চাকরি। এসআই পদে দার্জিলিংয়ে পোস্টেড ছিলেন। বিমল গুরুংকে ধরতে পুলিশের অপারেশনে তিনিও ছিলেন। সেখানেই গুরুংপন্থীদের গুলিতে মৃত্যু হয় দার্জিলিং থানার এসআই অমিতাভ মালিকের। কালীপুজোর ছুটিতে সস্ত্রীক মধ্যমগ্রামের বাড়িতে ফেরার কথা ছিল অমিতাভ-র। ফিরলেনও কালীপুজোর আগে। তবে শেষ ছুটি নিয়ে। কফিনে শুয়ে।

শনিবার বেলা ২টো নাগাদ অমিতাভ মালিকের কফিনবন্দি দেহ এসে পৌঁছয় কলকাতা বিমানবন্দরে। সেখানে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে সামিয়ানার তলায় রাখা হয় কফিন। তাঁকে পুষ্পস্তবক দিয়ে শেষশ্রদ্ধা জানান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ছিলেন পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। এখানেও স্বামীর কফিন জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর স্ত্রী। পরে শববাহী যানে তোলার পরও গাড়িতে বসে কফিনের দিকে চেয়ে অঝোরে কেঁদে চলেন তিনি। তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা করেন তাঁর ভাই ও বৌদি।


বিমানবন্দর থেকে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় অমিতাভ মালিকের বাড়ি মধ্যমগ্রামে। সঙ্গী হন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সহ পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা। ততক্ষণে শোকস্তব্ধ গোটা মধ্যমগ্রাম ভেঙে পড়েছে থানা সংলগ্ন মাঠের অস্থায়ী মঞ্চের চারপাশে। ভিড় ঠেলে গাড়ি পৌঁছয় মঞ্চের সামনে। সেখানে কফিনবন্দি দেহ বার করে রাখা হয় মঞ্চে। ২ মন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার, রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ সহ পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। এখানেই অমিতাভ মালিককে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বহু মানুষ।

কফিনবন্দি দেহটাই একবার শেষ দেখা দেখতে তখন বাড়ির ছাদ, গাছের ওপর, চিলেকোঠা, রাস্তা সবই মানুষের ভিড়ে ছয়লাপ। প্রায় সকলের চোখেই জল। অমিতাভবাবু দেহ আগলে তখনও অঝোরে কেঁদে চলেছেন তাঁর স্ত্রী, বাবা, মা। এরমধ্যে বেশ কয়েকবার অজ্ঞানের মত অবস্থা হয় মায়ের। মহিলা পুলিশ কর্মীরা তাঁদের সামলানোর চেষ্টা করেন। সামলানোর চেষ্টা করেন আত্মীয়রাও। কিন্তু অমিতাভ মালিকের স্ত্রীকে সেখান থেকে নড়ানো যাচ্ছিল না। আশপাশে তখন শোকস্তব্ধ মানুষ কেঁদে চলেছেন। এর মাঝেই পৌনে ৩টের সময় ভারতের জাতীয় পতাকায় মোড়া শহিদ এসআই অমিতাভ মালিককে গান স্যালুট দিয়ে সম্মান জানানো হয়। এরপর দেহ রওনা হয় স্বরূপনগরের উদ্দেশে। সেখান থেকে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় নিমতলা মহাশ্মশানে। সেখানেই বিকেলে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় তরুণ সাহসী পুলিশ আধিকারিক অমিতাভ মালিকের।


Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button