কানের ধারে আঁচর, নখের খাঁজে যে রক্তের দাগ লেগে রয়েছে তা সম্ভবত এড়িয়ে গিয়েছিল খুনির চোখ। সেই দাগই শেষপর্যন্ত ধরিয়ে দিল সল্টলেকে নৃশংসভাবে খুন হওয়া অবসরপ্রাপ্ত সরকারি ইঞ্জিনিয়ারের হত্যাকারীকে। পুলিশ সূত্রের খবর, ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেই অভিজিৎ নাগ চৌধুরীর হত্যার দায় পুলিশের কাছে স্বীকার করে নিয়েছে ভাড়াটে সঞ্জয় আগরওয়াল।
গত বুধবার রাতে সল্টলেকের বি ডি ব্লকে নৃশংসভাবে খুন হওয়া প্রৌঢ় অভিজিৎ নাগ চৌধুরীর হত্যা তদন্তে তৈরি হয় একাধিক নাটকীয় মোড়। ঘটনাস্থল থেকে মৃতের মোবাইল ফোনসহ সোনার গয়নার হদিশ না মেলায় খুনের উদ্দেশ্য নিয়ে ধন্ধে পড়ে যায় পুলিশ। ভয়াবহ হত্যা রহস্যের জাল গোটাতে পুলিশের ম্যারাথন জেরার মুখোমুখি হতে হয় মৃতের পরিবারের সদস্যসহ পরিচিতদের। জিজ্ঞাসাবাদের সময় নিহত বৃদ্ধের ভাড়াটে সঞ্জয় আগরওয়ালের কানের পাশে আঁচড়ের দাগ লক্ষ্য করে পুলিশের যাবতীয় সন্দেহ গিয়ে পড়ে তার ওপর। এরপর তার নখে রক্তের দাগ দেখে সন্দেহ দৃঢ় হয় বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দাদের। চাপের মুখে অভিজিতবাবুকে খুনের কথা সঞ্জয় আগরওয়াল স্বীকার করে বলে জানায় পুলিশ।
পেশায় বৈদ্যুতিন সামগ্রীর বিক্রেতা সঞ্জয় একটি গ্যারেজ ভাড়া নিয়েছিল অভিজিতবাবুর বাড়িতে। কয়েক মাস আগে সে ৪২ হাজার টাকা ধার করেছিল বাড়িওয়ালা অভিজিৎ নাগ চৌধুরীর কাছ থেকে। সেই টাকা সময়মত ফেরত না দিতে পারায় পদে পদে তাকে অভিজিতবাবুর ভর্ৎসনার শিকার হতে হচ্ছিল। সঞ্জয় পুলিশের কাছে দাবি করেছে তাকে নাকি বাড়িওয়ালা মারতেও গিয়েছিল।
ধারের টাকা শোধ করতে না পারায় সম্প্রতি অভিজিৎবাবু তাকে পরিবারের সামনেই চূড়ান্ত অপমান করেন। এর প্রতিশোধ নিতেই মৃত প্রৌঢ়ের বাড়ির নকল চাবি তৈরি করে সঞ্জয়। বুধবার রাতে অভিজিতবাবুর বাড়িতে ঢুকে তাঁকে কুপিয়ে খুন করে বলে পুলিশকে জানিয়েছে সঞ্জয়। তদন্ত প্রক্রিয়াকে বিভ্রান্ত করতেই বৃদ্ধের যৌনাঙ্গে আঘাত করা হয় বলেও জেরায় স্বীকার করে নেয় সে। সঞ্জয়ের বয়ানের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করেছে বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ। মাত্র এক দিনের ব্যবধানে পুলিশের এই হত্যাকাণ্ডের কিনারা করা তারিফযোগ্য বলে মেনে নিচ্ছেন অনেকেই।