বছরের প্রথম দিনে টানটান উত্তেজনায় কাটালেন দমদমের এমএম ঘোষ রোডের বাসিন্দারা। কী হয়, কী হয়, প্রশ্ন নিয়ে বিস্ফারিত চক্ষে বেলা ১১টা থেকে চেয়ে থেকেছেন তাঁদেরই পাড়ার একটি বাড়ির কার্নিশের দিকে। ঘাড় ব্যথা করলে নামিয়ে নিয়েছেন কিছুক্ষণ। ফের তাকিয়েছেন। এভাবেই চলেছে প্রায় ৬ ঘণ্টা। অবশেষে বিকেল পৌনে ৫টায় নাটকে যবনিকা পড়ে।
গত রবিবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে বাইকে চড়ে বেরিয়েছিল ওই কিশোর। বর্ষবরণের রাত বাড়ির বাইরে কাটিয়ে ফেরে সোমবার সকালে। বাড়ি ফিরতেই অভিভাবকদের রোষের মুখে পড়তে হয় তাকে। এভাবে গোটা রাত বাইকে চড়ে বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো মেনে নিতে পারেননি তার বাবা-মা। ছেলেকে কড়া ভাষায় শাসন করেন বাবা। বাবার বকুনি খেয়ে পাল্টা সে আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে ছাদে চলে যায় বলে অভিযোগ। তারপর ছাদ থেকে নামে কার্নিশে। বাড়ির লোকজন থেকে পাড়ার লোক, সকলেই তাকে ঝুঁকি না নিয়ে কার্নিশ থেকে নেমে আসতে অনুরোধ বলেন। কিন্তু কোনও কথা না শুনে দিব্যি এই কার্নিশ থেকে সেই কার্নিশে ঝুঁকির ঘোরাফেরা চালাতে থাকে সে। খবর যায় পুলিশ ও দমকলে। দমকল আধিকারিকরা এসেই দ্রুত সিঁড়ি লাগিয়ে তাকে নামাতে উদ্যত হন। কিন্তু তা দেখে রেগে যায় ছেলেটি। দমকলের সিঁড়ি ধরে নাড়াতে থাকে সে। ফলে ওই ঝুঁকি আর নেয়নি দমকল। সিঁড়ি ছেড়ে এবার উল্টোদিকের বাড়ির ছাদ, জানালা বা ছেলেটির ফ্ল্যাটের জানালা দিয়ে বুঝিয়ে তাকে কার্নিশ থেকে নেমে আসার অনুরোধ করতে থাকেন তাঁরা। পুলিশও বোঝানোর চেষ্টা করে। বাড়ির সামনে হাজির হয় অ্যাম্বুলেন্স। তাকে ধরতে গেলেই অবলীলায় অন্য কার্নিশে পালাতে থাকে ছেলেটি। মাঝে মধ্যে হাতে থাকা মোবাইল থেকে কাউকে ফোনও করতে দেখা যায় তাকে। ইচ্ছে হলে শুয়েও পড়ে কার্নিশে। এভাবেই কাটতে থাকে প্রহর। এদিকে যেখানে সে দাঁড়াচ্ছে, অর্থাৎ কার্নিশে, সেটি অনেক উঁচুতে। ফলে একটু এদিক ওদিক হলেই আর রক্ষে নেই। আছড়ে পড়বে একতলায়। শেষ হয়ে যাবে একটা তরতাজা প্রাণ। তাই চাপা টেনশন তো ছিলই।
এভাবেই কেটে যায় প্রায় ৬ ঘণ্টা। বিকেলের দিকে সে নিজের ফ্ল্যাটের জানালার ধারের কার্নিশে দাঁড়াতে তাকে জলের বোতল দেওয়া হয়। জল পানও করে সে। কিন্তু বিস্কুট দিতে গেলে সাফ জানিয়ে দেয় বিস্কুট সে খাবে না। এরপর তার বাবা কার্যত কাকুতির স্বরেই ছেলেকে নেমে আসার কথা বলতে থাকেন। জানান, তিনি এখনই তাকে একটি বাইক কিনে দেবেন। চাইলে সে কথা তিনি তখনই লিখে দিতেও প্রস্তুত। তার মা যে কেঁদে চলেছেন তাও কিশোরকে জানান তিনি। অনুরোধ করেন ছেলে শুধু তার আত্মহত্যার পরিকল্পনা ত্যাগ করে কার্নিশ থেকে নেমে আসুক। পৌনে ৫টা নাগাদ অবশেষে ছেলের মানভঞ্জন হয়। দমকলের সিঁড়ি দিয়েই আস্তে আস্তে নিচে নেমে আসে সে। মাটিতে নামতেই পাড়াপড়শি থেকে বাড়ির লোক, পুলিশ থেকে দমকল সকলেই হাততালি দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানান। দ্রুত তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। যবনিকা পড়ে বছর পয়লার টানটান নাটকে।