শীতকাল মানে যেমন হিমের পরশ গায়ে মেখে কাছে-দূরে ঘুরে আসা। আবার শীতের শুরু থেকেই নানা উৎসবে মুখরিত হয়ে ওঠে তিলোত্তমা কলকাতা। যার মধ্যে অন্যতম মেলা। হিমের পরশ গায়ে মেখে তাই চট করে ঢুঁ দিয়ে আসতে পারেন ‘স্বামী বিবেকানন্দ মিলন মেলা’-য়। গত ১০ জানুয়ারি রামকৃষ্ণ মঠের অধ্যক্ষ স্বামী শিবময়ানন্দ মেলার উদ্বোধন করেন। ৪ দিন ব্যাপী এই মেলা বসেছে সিমলা ব্যায়াম সমিতির কালী সিংহী পার্কে। সময়সীমা বিকেল ৪টে থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত।
মেলার প্রবেশপথ ছিমছাম আলোর মালায় সজ্জিত। ভিতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে নানা পসরার বিপণি, বাচ্চাদের ‘রাইড’। প্রায় ৪২টির মত স্টল সাজানো রকমারি সম্ভারে। বইপোকারা হামলে পড়তে পারেন বইয়ের স্টলে। ভোজনরসিকদের রসনা পরিতৃপ্ত করতে মেলায় উপস্থিত রকমারি খাবারের স্টল। সেখানে যেমন পাবেন কাবাব-তন্দুরির মোঘলাই যুগলবন্দি। তেমনি আছে পিঠে-পুলি, ঝাল-নোনতা খাবার আস্বাদনের সুবর্ণ সুযোগ। মেলা ঘুরতে ঘুরতে টুকটাক কেনাকাটার পাশাপাশি গরম চা বা কফিতে দিতে পারেন উষ্ণ চুমুক।
আর পাঁচটা মেলার মত এই মেলাতেও ঘর সাজানোর বা মহিলা বাহিনীর নিজেকে সাজিয়ে তোলার নানা হাতে তৈরি শিল্প সামগ্ৰির স্টল চোখে পড়ে। আর যাঁরা মেলা ঘুরেটুরে পদযুগল ও চক্ষুকর্ণপ্রাণের আরাম নিতে ইচ্ছুক, তাঁদের জন্য মেলার একদিকে আছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চ। সেখানে চলে বিভিন্ন ধরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের শোভাবর্ধন করতে প্রতিবছর মেলায় আমন্ত্রিত হয়ে আসেন সমাজের মান্যগণ্য ব্যক্তিরা।
নাচ, গান, গীতি আলেখ্য, যাদু প্রদর্শনী, শারীরিক ক্রিয়া কৌশল প্রদর্শন, আবৃত্তি, আলোচনা পাঠ, কথকতাসহ নানা মনোগ্ৰাহী অনুষ্ঠানে দর্শকদের আনন্দ দান করেন কুশীলবরা। অনুষ্ঠান শেষে স্মারক সম্মান দিয়ে সম্বর্ধনা জানানো হয় শিল্পীদের।
২০১১ সালে পথ চলা শুরু এই মেলার। নয় নয় করে যা পার করে গেল ৭টি বছর। মেলা মানে মানুষের মিলনক্ষেত্র। আর যুবসংগঠক স্বামী বিবেকানন্দের স্বপ্নই ছিল জাতিকে সংগঠিত করে তোলা। মানুষের সাথে মানুষের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে তোলা। তাঁর সেই স্বপ্নকে অন্যভাবে বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেয় সিমলা ব্যায়াম সমিতির ‘বিবেকানন্দ পাঠচক্র’।
স্বামীজির আবির্ভাব দিবসকে উদযাপন করতে মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করার ভাবনা আসে পাঠচক্রের সদস্যদের মনে। তাঁরা দ্বারস্থ হন স্বামী শিবময়ানন্দের। যিনি একসময় উত্তর কলকাতার সিমলা স্ট্রিটে স্বামীজির পৈতৃকভিটে অধিগ্ৰহণের কাজে যুক্ত ছিলেন। তাঁর সম্মতি পাওয়া মাত্রই পাঠচক্রে বিবেকানন্দের কর্মানুরাগী সদস্যরা পার্কের স্বল্প পরিসরে সুষ্ঠুভাবে বিগত ৭ বছর ধরে আয়োজন করে চলেছেন ‘স্বামী বিবেকানন্দ মিলন মেলা’।
স্বামীজির আবির্ভাব দিবস স্মরণে শোভাযাত্রার পাশাপাশি বিবেকানন্দের পৈতৃকভিটেয় জানানো হয় সশ্রদ্ধ শ্রদ্ধার্ঘ্য। তাই আর দেরি না করে এবারের মেলা পরিক্রমা শুরু হোক বিবেকানন্দের বৃহত্তর ভাবনার এক ক্ষুদ্র সাংস্কৃতিক প্রয়াস মিলন মেলার হাত ধরে।