সরস্বতী পুজো। তাই বাজারে জমা করা ছিল প্রচুর মালপত্র। সকালে বিভিন্ন জায়গায় অর্ডার ডেলিভারিরও কথা ছিল। সেইসঙ্গে পুজো উপলক্ষে বাজারের কেনাকাটার চাপ থাকবে বলে মালও মজুত ছিল। ভোর হলেই ভাল বিক্রির আশায় যখন ব্যবসায়ীরা তৈরি, তখন তার আগে রাত দেড়টা নাগাদ আচমকাই দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে দমদম গোরাবাজারের একটি অংশ। দ্রুত আগুন ছড়াতে থাকে। ঘিঞ্জি বাজার এলাকা হওয়া দাহ্য পদার্থের অভাব ছিলনা। ফলে আগুন ছড়াতে সময় নেয়নি। দমকলে খবর দেওয়া হলে একে একে দমকলের ২২টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে হাজির হয়। ঘিঞ্জি এলাকা, অপরিসর অনেক পথ। ফলে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয় দমকলকে। যদিও পাল্টা দমকলের দেরি করে আসা ও আগুন নেভানোর জন্য তাদের কাছে পর্যাপ্ত জলের অভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সব হারানো ব্যবসায়ীরা।
আগুন বাজার হয়ে পৌঁছে যায় লাগোয়া ব্যাঙ্কেও। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ওই শাখায় বাজারের অধিকাংশ ব্যবসায়ীর অ্যাকাউন্ট রয়েছে। রয়েছে লকারও। যেখানে দোকানের মালিকানার প্রামাণ্য নথি থেকে পারিবারিক নথি, গয়না মজুত ছিল। ব্যবসায়ীদের অনেকেই একাধারে দোকান হারানোর শোক আর ব্যাঙ্কে থাকা সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার কষ্টে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বুঝতেই পারছেন না এবার তাঁরা কি করবেন? অনেকেই আগুন লাগার জন্য ব্যবসায়ী সমিতির গাফিলতিকে কাঠগড়ায় চাপিয়েছেন। তাঁদের দাবি, এত ঘিঞ্জি বাজারে ২০০৬ সালেও আগুন লেগেছিল। সেই সময়ের থেকে শিক্ষা নিয়ে উচিত ছিল অগ্নিনির্বাপণের যথেষ্ট ব্যবস্থা করা। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, সমিতি সে ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়নি। ফলে আজ তাঁদের এই দিনটা দেখতে হল। এমনকি অনেকে অন্তর্ঘাতের অভিযোগও তুলে দিয়েছেন।
ওই বাজারেই চায়ের দোকান রয়েছে প্রৌঢ় সুনীল সাউয়ের। ভোরে দোকান খোলেন বলে রাতে দোকানেই শাটার টেনে ঘুমতেন সুনীলবাবু। এদিন আগুন লাগার পর সেই শাটার খুলে আর বার হওয়ার সময় পাননি তিনি। দোকানের মধ্যেই ধোঁয়ায় দম আটকে মৃত্যু হয় তাঁর।
আগুন লাগার কারণ অজানা হলেও দমকলের প্রাথমিক অনুমান শর্টসার্কিট থেকেই আগুন লাগে। একটি প্লাস্টিকের দোকান থেকে আগুন ছড়ায় বলে অনুমান তাদের। যদিও সঠিক কারণ খতিয়ে দেখছে দমকল। এদিকে দীর্ঘক্ষণের চেষ্টায় আগুন আয়ত্তে এলেও, সকালেও পোড়া ধ্বংসস্তূপের মধ্যে ছাইচাপা লুকিয়ে থাকা আগুনের খোঁজে তল্লাশি জারি রাখেন দমকলকর্মীরা। সরস্বতী পুজোয় যখন গোটা রাজ্য মাতোয়ারা, দমদমের গোরাবাজারে এদিন সকালে তখন শ্মশানের নিস্তব্ধতা আর হাহাকার।