খিদিরপুরের ভূকৈলাস ময়দান গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে হয়ে উঠেছিল একেবারে জমজমাট। শিবরাত্রি উপলক্ষে মেলা চলছিল সেখানে। গত শুক্রবারের আগে পর্যন্ত ভালই লোকসমাগম হচ্ছিল মেলায়। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যার দুর্ঘটনার পর রাতারাতি তা শ্মশানের চেহারা নিয়ে নিয়েছে।
মেলা মানেই দেদার মজা, খাওয়াদাওয়া। মেলা মানেই নাগরদোলা সহ নানা ধরণের জয় রাইড। ৫ বছরের সমৃদ্ধি মিশ্র তাই মায়ের কাছে ময়ূরপঙ্খী চড়ার বায়না করেছিল। চৌবাগার বাসিন্দা ওই শিশুকন্যা মায়ের সঙ্গে মামাবাড়ি এসেছিল। মামাবাড়ির সামনে মেলা বসেছে শুনে মাকে নিয়ে শুক্রবার মেলাপ্রাঙ্গণে হাজির হয় সে। মেলায় ময়ূরপঙ্খী রাইড দেখতেই তা চড়ার জন্য বায়না ধরে খুদে সমৃদ্ধি।
মেয়ের আবদারে না করতে পারেননি মা। ছোট্ট মেয়েকে রাইডে চাপার অনুমতি দেন তিনি। কিন্তু তিনি নিজে ময়ূরপঙ্খী রাইডে চড়েননি। নিচে দাঁড়িয়ে মেয়ের আনন্দের মুহুর্তকে উপভোগ করছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, যন্ত্রচালিত নৌকা চালু হতেই বেশ জোরে জোরে দুলতে শুরু করে। এটাই রাইড। এটাই মজা। সেইসময় উত্তেজনা ও ভয়ে চিৎকার করে উঠছিলেন সফরসঙ্গীরা। আচমকাই সেই চিৎকার বদলে যায় আর্তনাদে। উপস্থিত লোকজন অবাক হয়ে দেখেন, ময়ূরপঙ্খী থেকে কে যেন ছিটকে নিচে গিয়ে পড়ল। ঘটনার আকস্মিকতা কাটিয়ে ওঠার পর তাঁরা দেখেন একটি শিশুকন্যা মাটিতে পড়ে আছে। সংজ্ঞাহীন শিশুর মাথা ফেটে গলগল করে রক্ত বার হচ্ছে।
মেলায় উপস্থিত লোকজনের চিৎকারে ততক্ষণে সম্বিত ফিরেছে শিশুর মায়ের। ভিড় ঠেলে এগিয়ে মেয়েকে মাটিতে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে প্রথমে হতবাক হয়ে যান তিনি। মেয়ের সাথে ঠিক কি ঘটেছে প্রথমে বুঝে উঠতে পারছিলেন না তিনি। যখন বুঝতে পারলেন, তখন কান্নায় ভেঙে পড়েন শিশুর মা। রাইড থেকে শিশুকন্যা পড়ে যাওয়ার ঘটনা চাউর হতেই বন্ধ হয়ে যায় মেলার অন্যান্য রাইড।
স্থানীয়দের সাহায্যে দ্রুত জখম সমৃদ্ধিকে নিয়ে ভর্তি করা হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখান থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে। শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
মেলা প্রাঙ্গণে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পরে তদন্তে নামে পুলিশ। দেখা যায়, যে ময়ূরপঙ্খীতে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, তার বসার সিটে হাতল নেই। পুলিশের অনুমান, হাতল না থাকায় প্রবল বেগে দুলতে থাকা যন্ত্রচালিত নৌকা থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শিশুটি ছিটকে বাইরে গিয়ে পড়ে। ময়ূরপঙ্খীটি যারা চালাচ্ছিল দুর্ঘটনার পর থেকেই তারা পলাতক। তাদের খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ। পাশাপাশি খতিয়ে দেখা হচ্ছে মেলার সুরক্ষা ও পরিকাঠামোগত দিক।