এ যেন করুণ কোনও গল্পের পাতা থেকে উঠে আসা জীবনের কাহিনি। বৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রী। জীবনে সব কর্তব্যই সম্পূর্ণ করেছেন। কিন্তু জীবনের অনেকটা পথ পার করেও ভালোবাসায় এতটুকু চিড় ধরেনি। হয়তো সেই ভালোবাসার টানেই শেষ হয়ে গেল দুজনের জীবন। বেহালার পর্ণশ্রীর বেণী মাস্টার লেন। এখানেই দীর্ঘদিনের বাসিন্দা রথীন্দ্রনাথ রায়। স্ত্রী মীনাক্ষী রায়কে নিয়ে একাই থাকতেন অবসরপ্রাপ্ত এই রাজ্য সরকারি কর্মচারি। ছেলে গুরুগ্রামে কর্মরত। মেয়ের বিয়ে অনেকদিন হয়ে গেছে। বেহালায় ৭৩ বছরের রথীন্দ্রবাবু ও তাঁর স্ত্রী একাই থাকতেন। মীনাক্ষীদেবীর সেরিব্রাল অ্যাটাকের পর তিনি শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। সেও ২ বছর হল।
গত সোমবারের পর এই দম্পতির বাড়ির দরজা আর খোলেনি। মঙ্গলবার সন্দেহ হওয়ায় প্রতিবেশিরা খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেন। আসেন দম্পতির পরিজনদের কয়েকজন। তাঁরা ঘরে ঢুকে দেখেন খাটে পড়ে আছে মীনাক্ষীদেবীর নিথর দেহ। আর পাশে গলা কাটা অবস্থায় পড়ে রথীন্দ্রবাবুর দেহ। রক্তে ভেসে যাচ্ছে ঘর। পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে দেহ দুটি উদ্ধার করে।
পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, মীনাক্ষীদেবীর হয়তো আগেই মৃত্যু হয়। সেই শোক সহ্য করতে পারেননি একাকী রথীন্দ্রনাথ রায়। তাই স্ত্রীর পাশে তিনিও ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে নিজেকে শেষ করে দেন। পাড়াপড়শিদের একাংশের অভিযোগ, ছেলে-মেয়ে নাকি বাবা-মায়ের তেমন খোঁজ নিতেন না। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান যদি সত্যি হয় তবে শেষ জীবনের একাকীত্বের অনুভূতি যে কী ভয়ংকর হতে পারে তা এই ঘটনা থেকে আরও একবার প্রমাণ হল। কলকাতা শহর জুড়ে কিন্তু এই ছেলে-মেয়ে বাইরে আর এখানে একা বাবা-মা, এই বাতাবরণ বৃহৎ আকার নিচ্ছে। যা এই বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের ঠেলে দিচ্ছে চরম মানসিক অবসাদের দিকে।