সোমবার রাতের দিকের মেট্রো। অপেক্ষাকৃত খালি গাড়িতেই ওঠেন এক তরুণ-তরুণী। অভিযোগ এর কিছুক্ষণ পর তাঁরা আচমকাই একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন। আলিঙ্গনাবদ্ধ অবস্থায় তাঁদের দেখে প্রথমে অবাক হয়ে যান যাত্রীরা। কিন্তু তারপরই কামরায় থাকা প্রবীণ মানুষজন এই কাণ্ডে প্রবল চটে যান। দমদম স্টেশন আসতেই যুগলকে টেনে নামানো হয় ট্রেন থেকে। তারপর স্টেশনেই শুরু হয় মারধর। সঙ্গে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ। কিল, চড়, ঘুষি সবই পড়তে থাকে। অভিযোগ এই নিগ্রহের পুরোভাগে ছিলেন বেশ কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তি। সেই ছবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়।
শহরের এই ‘নীতি পুলিশগিরি’র বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদের ঝড় আছড়ে পড়ে। এমন নয় যে সকলেই প্রতিবাদে মুখর হন। কয়েকজন এমন কাণ্ডের জন্য ওই তরুণ-তরুণীকেই কাঠগড়ায় চাপান। তবে সে সংখ্যা কম। সোমবার রাতে এই ঘটনা ঘটার পর মঙ্গলবার সকালেই সরব হন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। তাঁদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে প্রতিবাদে মুখর হন শহরের নতুন প্রজন্ম। বেশ কয়েকটি মেট্রো স্টেশনের সামনে প্রতিবাদে মুখর হন তাঁরা। হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড। তাঁদের দাবি, এই শহরেই যখন কোনও মহিলার ওপর অত্যাচার হয়। যখন শ্লীলতাহানি হয় তখন পাশ কাটিয়ে গা বাঁচিয়ে চলে যেতে কারও দ্বিধাবোধ হয়না। কিন্তু আলিঙ্গন করলেই যত দোষ! তখন তাঁরা রেরে করে তেড়ে আসেন! ‘#hokalingon’ নাম দিয়ে মূলত ছাত্রছাত্রীদের এই প্রতিবাদে অনেকে তাঁর পছন্দের মানুষকে আলিঙ্গনও করেন। প্রকাশ্যে এই আলিঙ্গনই ছিল তাঁদের প্রতিবাদের ভাষা। তাঁদের প্রশ্ন, আলিঙ্গন কারও ক্ষতি করেনা। বেআইনিও নয়। তাহলে কেন এক যুগলকে এভাবে হেনস্তার শিকার হতে হল?
এই ঘটনায় প্রকাশ্যে আলিঙ্গনের সপক্ষেই মুখ খুলেছেন লেখিকা তসলিমা নাসরিনও। এদিকে মেট্রো কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে মেট্রো রেল ‘নীতি পুলিশগিরি’-তে বিশ্বাসী নয়। তবে তাঁদের নিগ্রহ করা হয়েছে এমন কোনও অভিযোগও ওই যুগলের তরফে মেট্রো কর্তৃপক্ষের কাছে জমা পড়েনি বলে জানিয়েছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ।