গত রবিবার রাত ৯টা নাগাদ দক্ষিণ কলকাতার পণ্ডিতিয়া রোডে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত পথচারির ভিড়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সেসময়ে একটা ট্যাক্সি রাস্তা ধরে আসছিল। ট্যাক্সির ভিতরে চালক ছাড়াও ৩-৪ জন যুবক ছিল বলে দাবি স্থানীয়দের। ট্যাক্সিটি প্রথমে ২ জন তরুণী পথচারির পাশে চলে আসে। তারপর কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই হাতে থাকা প্যাকেট থেকে অ্যাসিড ছুঁড়ে দেয় চালক। প্রথমে নোংরা জল বলে সন্দেহ হলেও কিছু পরেই জ্বলতে শুরু করে চামড়া। দ্রুত জলের জন্য মিষ্টির দোকানের দিকে ছোটেন ২ তরুণী। এরমধ্যেই কাছাকাছি থাকা আরও ৪ মহিলার গায়ে অ্যাসিড ছুঁড়ে দেয় ট্যাক্সিতে থাকা যুবকরা। অ্যাসিড ছিটিয়ে লাগে এক পথচলতি যুবকের গায়েও।
অ্যাসিডে পোড়ার জ্বালায় মহিলাদের আর্ত চিৎকারে স্থানীয় মানুষজন বুঝতে পারেন কিছু একটা ঘটেছে। বুঝতে পারেন তরল জাতীয় যে পদার্থটি ট্যাক্সি থেকে ছুঁড়তে দেখা গিয়েছিল তা আর কিছুই নয়, অ্যাসিড। ততক্ষণে মুখে, গায়ে অসহ্য জ্বালা নিয়ে রাস্তায় বসে পড়েছেন মহিলারা। জল চাইছেন। এই ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। অনেকে জড়ো হয়ে যান সেখানে। আহত মহিলাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এমন এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে তখনও পণ্ডিতিয়া রোডে মানুষ ভিড় করে আলোচনা করছেন। এমন সময় ঘটনার মিনিট ১৫ বাদে ফের ওই ট্যাক্সিটি ফিরে আসে সেখানে। ট্যাক্সিটিকে চিনতে পেরে স্থানীয় বাসিন্দারা সেটিকে ধাওয়া করেন। অভিযোগ, বেগতিক বুঝে স্থানীয় এক ব্যক্তির হাত কামড়ে দিয়ে, অ্যাসিড ছুঁড়তে ছুঁড়তে কিছুটা এগিয়ে ট্যাক্সি ছেড়ে চম্পট দেয় চালক ও কয়েকজন যুবক। তাদের নাগাল না পেলেও উত্তেজিত জনতা ট্যাক্সিটিতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। পরে কালীঘাট থানার পুলিশ ট্যাক্সিটি আটক করে। এসএসকেএমে প্রাথমিক চিকিৎসার পর রাতে রবীন্দ্র সরোবর থানায় অভিযোগ জানান আক্রান্তরা। ট্যাক্সির মালিককে তলব করে পুলিশ। ট্যাক্সির মালিক চালকের খোঁজে তার বাড়ি গেলে দেখেন সেখানে তালা ঝুলছে। চালক সহ অভিযুক্তদের খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ।
কিন্তু ঠিক কী কারণে এই হামলা তা নিয়ে ধোঁয়াশায় পুলিশ। কারণ যাঁদের লক্ষ্য করে অ্যাসিড ছোঁড়া হয়েছে তাঁরা কেউ কাউকে চেনেন না। নেহাতই পথচারী। তাহলে তাঁদের লক্ষ্য করে অ্যাসিড ছোঁড়ার কারণ কী? আবার যাঁদের লক্ষ্য করে অ্যাসিড ছোঁড়া হয়েছে তাঁরা সকলেই মহিলা। তবে কী কোনও আক্রোশ থেকে এমন কাণ্ড? নাকি আদিম উল্লাসেই ছোঁড়া হয় অ্যাসিড? আবার তাই যদি হবে তাহলে কেবল পণ্ডিতিয়া রোডেই কেন? সবদিক তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।