সিঁড়িতে চাপ চাপ রক্ত। সেই রক্তের ওপরেই এলিয়ে পড়ে আছে শম্পা দাসের হাত-পা বাঁধা দেহ। সিঁড়ির ওপরের ঘরে চেয়ারের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বাঁধা তাঁর স্বামী। গায়ে তাঁর অল্পবিস্তর আঘাতের চিহ্ন। ঘরের চারদিকে ভালো করে নজর করলেই বোঝা যায়, যেন একটা ঝড় বয়ে গেছে! আলমারি লণ্ডভণ্ড। জিনিসপত্র উলঢাল। প্রাথমিকভাবে মনে হতেই পারে, লুটপাটের উদ্দেশ্যেই তছনছ করা হয়েছে সাজানো আলমারি। তবে শুধু সেই অনুমানের ভিত্তিতে তদন্ত এগোতে চাইছে না পুলিশ। কারণ, পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, স্ত্রীকে খুন করে দুষ্কৃতী হামলা ও লুঠের মিথ্যা গল্প ফেঁদেছেন মহিলার স্বামী সুপ্রতিম দাস। একই সন্দেহ তাড়া করে বেড়াচ্ছে কৈখালির চিড়িয়া মোড় এলাকার বাসিন্দাদেরও।
গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ মৃত মহিলার সাড়ে ৩ বছরের ছেলের কান্নার আওয়াজ শুনে ছুটে এসেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বাড়িতে ঢুকে তাঁরা দেখেন, সিঁড়ির ওপর পড়ে রয়েছে মহিলার রক্তমাখা দেহ। মাথায় ভারী আঘাতের চিহ্ন। নিউটাউন থানায় সিভিক ভলান্টিয়ার হিসাবে কর্মরত ছিলেন তিনি। সিঁড়ি বেয়ে ওপরের ঘরে তাঁর স্বামীকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করেন প্রতিবেশিরা। খবর দেওয়া হয় থানায়। পুলিশ এসে মহিলা ও তাঁর স্বামীকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। শম্পা দাসকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। ওই মহিলাকে মাথায় আঘাত করে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে বলে অনুমান পুলিশের। মৃতার স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
মৃত মহিলার স্বামী পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, গত শুক্রবার রাতে তাঁদের বাড়ি কয়েকজন দুষ্কৃতী হামলা চালায়। লুটপাট চালানোর পর তারা তাঁকে মারধর করে বেঁধে রেখে তাঁর স্ত্রীকে খুন করে। যদিও তাঁর বয়ানে অসঙ্গতি রয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ। দুষ্কৃতীদের হামলার সময় একবারের জন্য সুপ্রতিম দাস চিৎকার করেননি কেন? আলমারি এলোমেলো থাকলেও কিছু খোয়া যায়নি কেন? কি কি জিনিস খোয়া গেছে তা মৃতার স্বামী পুলিশকে জানাতে পারছেন না কেন? নাইলনের সরু দড়ির বাঁধন তিনি পরে খোলার চেষ্টা করেননি কেন? এইসব প্রশ্নই ভাবাচ্ছে পুলিশকে। তাছাড়া ইদানিং সুপ্রতিম দাস তাঁর স্ত্রীর চরিত্র নিয়ে সন্দেহ করতেন। এই নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর অশান্তিও হত। তাই স্ত্রীকে পরিকল্পনা মাফিক খুন করে ওই ব্যক্তি অভিনয় করছেন কিনা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।