চাঁদের হাট বসল ব্রিগেডের সভামঞ্চে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের তাবড় নেতৃত্ব এদিন জড়ো হলেন এক মঞ্চে। স্বীকার করলেন এটা সম্ভব হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য। সকলের মুখেই ছিল এক বার্তা। মোদী সরকারকে পর্যুদস্ত করা ডাক। এদিনের সভামঞ্চ একটা বিষয় পরিস্কার করে দিল যে মতাদর্শগত বিভেদ থাকতে পারে। কিন্তু কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে হঠাতে তাঁরা এককাট্টা। ডিএমকে নেতা স্ট্যালিন এই সমাবেশ থেকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দিলেন। অন্যদিকে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিএস নেতা কুমারস্বামী জানালেন কর্ণাটকে সরকার ভাঙার চেষ্টা করছে বিজেপি। বিজেপির বিরুদ্ধে এককাট্টা হওয়ার ডাক দেন তিনি। মমতাকে ধন্যবাদ দেন তিনি। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবেগৌড়া সকল বিরোধী শক্তিকে একজোট হয়ে একটি ইস্তেহার তৈরির ডাক দেন। স্থায়ী সরকারের পক্ষে সওয়াল করে তিনি এদিন কার্যত মমতাকে তাঁদের নেতা হিসাবে মেনে নেন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, মোদী ও অমিত শাহ জুটি দেশের অর্থনীতির সর্বনাশ করছে। প্রধানমন্ত্রীর আচ্ছে দিনের স্লোগানকে হাতিয়ার করে তিনি বলেন মোদী অমিত শাহ গেলেই আচ্ছে দিন আসবে। এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার সাফ জানান তিনি কোনও ব্যক্তিগত প্রত্যাশা নিয়ে ব্রিগেডে আসেননি। তাঁর দাবি, তিনি মানুষের স্বার্থে এখানে হাজির হয়েছেন। আর মানুষের স্বার্থেই মোদী সরকারকে হারানোর ডাক তিনি দিচ্ছেন বলে জানান এই বর্ষীয়ান নেতা।
অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু এদিন এমন এক সমাবেশে আপ্লুত। তিনি বলেন, এভাবে বিরোধীদের এক মঞ্চে হাজির করে এত মানুষের জমায়েত করা একটা অসাধারণ পদক্ষেপ। তাঁদের এই ইউনাইটেড ইন্ডিয়া দেশের গণতন্ত্র রক্ষা করবে। কর্ণাটকে বিধায়কদের মোটা অঙ্কের টাকার লোভ দেখিয়ে দল ভাঙানোর চেষ্টা করছে বিজেপি বলেও অভিযোগ করে এদিন তিনি এমন কাজ না করার জন্য বিজেপিকে হুঁশিয়ার করেন। রাফাল থেকে কৃষকদের আত্মহত্যা সবই উঠে আসে তাঁর বক্তব্যে। ২০১৯ সালে নতুন প্রধানমন্ত্রী দেখতে চলেছে দেশ বলেও দাবি করেন তিনি। যদিও এদিন এই একই দাবি তাঁর বক্তব্যে পেশ করেন সপা নেতা অখিলেশ যাদব। অন্যদিকে শরদ যাদব বলেন, দেশের স্বাধীনতা বজায় রাখতে বিজেপিকে সরাতে হবে। মমতার উদ্যোগেরও প্রশংসা করেন তিনি। লালুপ্রসাদ যাদবের ছেলে তথা আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব এদিন পৌঁছন ব্রিগেডের সভার প্রায় শেষ লগ্নে। তাঁর দাবি, এদিনের ব্রিগেডের ভিড় দেখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘুম উড়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি চৌকিদার হতে পারেন কিন্তু দেশের মানুষ থানেদার। চৌকিদার ভুল করলে থানেদার তাঁকেও ছাড়বে না। বিজেপি বারবার এই বিরোধীদের জোটকে বৈচিত্র্যে ভরা বলে কটাক্ষ করছে। সেই প্রসঙ্গ টেনে তেজস্বী বলেন, তাঁদের এই অনেকতার মধ্যেই একতা লুকিয়ে আছে। তাঁরা দেশকে জুড়তে চান। আর তারজন্য সূচে সুতো দরকার। আর সেই নানা রঙের সুতো হল এই বিভিন্ন বিরোধী দল। নরেন্দ্র মোদীকে মিথ্যে বলার ডিস্ট্রিবিউটর বলে কটাক্ষ করেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গে উপস্থিত তামাম বিহারের মানুষকে মমতার হাত শক্ত করার আহ্বান জানান তিনি। এদিন মঞ্চ থেকে তাঁর দাবি, তাঁর বাবা লালুপ্রসাদ যাদবকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
এদিন মঞ্চে ছিলেন গুজরাটের ২ তরুণ নেতা হার্দিক প্যাটেল ও জিগনেশ মেভানি, ছিলেন ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার হেমন্ত সোরেন। অরুণাচলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সদ্য বিজেপি ছেড়ে আসা গেগং আপাং সহ বহু নেতা। সকলেই একবাক্যে বিরোধী ঐক্যকে আরও শক্তিশালী করা ও বিজেপিকে হারানোর লক্ষ্যে ঝাঁপানোর আহ্বান জানান।