রুজির টানে, জীবন জীবিকার টানে, কেরিয়ার গড়ার টানে এখন বহু ছেলে মেয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বা দেশের বাইরে। কলকাতা থেকে অনেক দূরে। এই শহরে থেকে যান তাঁদের বৃদ্ধ পিতামাতা। নিঃসঙ্গ, একা। এটাই শহর কলকাতার কোণায় কোণায়, পাড়ায় পাড়ায় ছড়িয়ে থাকা সত্য।
অনেকের ছেলে বাইরে চাকরি করছেন। কারও মেয়ের বিয়ে হয়েছে বাইরে। বয়স্ক বাবা-মা তাই বাড়ি আঁকড়ে একাই থাকেন। আরও বড় সমস্যা হয় যখন দুজনের একজন পৃথিবী ছেড়ে পাড়ি দেন অন্য লোকে। ইদানিংকালে পরপর এমন বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সফট টার্গেট করে হামলা করছে দুষ্কৃতিরা। কখনও প্রাণে মারছে। কখনও মারধর করে নিয়ে যাচ্ছে সর্বস্ব। এই অবস্থায় বাড়িতে একাকী থাকা বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের পাশে দাঁড়াল কলকাতা পুলিশ।
কলকাতা পুলিশের বিভিন্ন থানার তরফে তাদের এলাকায় ঘুরে ঘুরে কোন কোন বাড়িতে বৃদ্ধ বৃদ্ধারা একা থাকেন তার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তারপর থানা থেকে পুলিশ আধিকারিকরা পৌঁছে যাচ্ছেন এঁদের বাড়িতে। এঁদের অনেকের বাড়িতেই সিসিটিভি নেই। সেসব বাড়িতে অনেক ক্ষেত্রে বিনা খরচে সিসিটিভি লাগিয়ে দিচ্ছে পুলিশই। আধিকারিকরা দিয়ে যাচ্ছেন তাঁদের ফোন নম্বর। কোনও অসুবিধা হলেই যেন তাঁদের নির্দ্বিধায় ফোন করেন বৃদ্ধ বৃদ্ধারা, সে পরামর্শও দিয়ে যাচ্ছেন।
কলকাতার উত্তর হোক বা দক্ষিণ, কলকাতা পুলিশের এই উদ্যোগকে তারিফ করছেন সকলেই। প্রায় অসহায় বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের আশ্বাস দেওয়ার মত কাজ যে কলকাতা পুলিশের মহৎ উদ্যোগ তাও মেনে নিচ্ছেন শহরবাসী। পুলিশ কোনও বৃদ্ধ বৃদ্ধার পাশে আছে। তাঁদের খোঁজ খবর রাখছে এটা যেকোনও দুষ্কৃতির জন্যও একটা বাড়তি চাপ তৈরি করবে বলে মনে করছেন কলকাতা পুলিশের আধিকারিকরা। সেক্ষেত্রে ওই বৃদ্ধ বৃদ্ধাকে সফট টার্গেট করার আগে পাঁচবার ভাববে তারা। হয়তো ঝুঁকি নেবে না।
সিসিটিভি লাগানো থাকায় সহজে তাদের খোঁজও পুলিশ পেয়ে যাবে, সেই ভয়ও তাদের মধ্যে কাজ করবে বলে মনে করছেন পুলিশ আধিকারিকরা। কলকাতা পুলিশের এই উদ্যোগে শহরের বৃদ্ধ বৃদ্ধারা একটা আশ্বাস অন্তত পেলেন, যে তাঁরা এ শহরে একা নন। তাঁদের পাশে কেউ অন্তত আছে।