দুর্গাপুজো তখন অন্তিম লগ্নে। নবমী, দশমী। তখনই কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স বা এসটিএফের কাছে সেন্ট্রাল আইবি থেকে খবর আসে অন্য রাজ্য থেকে সন্দেহভাজন কয়েকজন কলকাতায় ঢুকেছে বা ঢুকতে চলেছে। সতর্ক হয়ে যায় এসটিএফ ও কলকাতা পুলিশ। সামনে তখন অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ ফুটবল। ফলে গোপনে খবরাখবর নেওয়ার কাজ চালাতে থাকে তারা। খোঁজ খবর করতে করতে ৩-৪ দিন আগে এসটিএফ জানতে পারে কলকাতায় একটি অস্ত্র কেনাবেচা হতে চলেছে। কিন্তু আজ হবে না, কাল হবে না করে দিন পিছতে থাকে ক্রেতা-বিক্রেতা দু’পক্ষই। ফলে পুলিশের অপেক্ষা করা আর গোপনে তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখা ছাড়া কিছু করার ছিল না। অবশেষে মঙ্গলবার দুপুরে তারা কলকাতা স্টেশন এলাকায় হাজির হয়। পুলিশ আগে থেকেই আটঘাট সাজিয়ে রেখেছিল। ৩ জন একজায়গায় জড়ো হতেই তাদের একেবারে হাতেনাতে গ্রেফতার করে এসটিএফ ও কলকাতা পুলিশ।
ধৃতদের মধ্যে ২ জন ক্রেতা ১ জন বিক্রেতা। এসটিএফের ধারণা এদিন কেনা বেচা নয়, অস্ত্র দেখতে এসেছিল তারা। ভাল লাগলে পরে কেনার পরিকল্পনা থাকতে পারে। এদিন লালবাজারে সাংবাদিক সম্মেলন করে একথা জানান এসটিএফের ডিসি মুরলীধর শর্মা। তিনি আরও জানান, যারা গ্রেফতার হয়েছে তাদের মধ্যে ২ জন বাংলাদেশি। ১ জন বসিরহাটের খোলাপোতার বাসিন্দা। ২ বাংলাদেশির কাছেই কোনও পাসপোর্ট বা ভিসা ছিল না। কিন্তু তারা গত দেড় বছর ধরেই ভারতে থাকছিল। এরা বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন আনসার বাংলা টিমের সদস্য। বাংলাদেশে একের পর এক ব্লগার খুনে এই সংগঠনের হাত রয়েছে। এরা আলকায়দার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কাজ করে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আইএসের মতাদর্শ মেনে।
ধৃত ২ বাংলাদেশির মধ্যে ১ জনের নাম সামসদ মিঞা ওরফে তনভির ওরফে তুষার বিশ্বাস। বছর ২৬-এর এই যুবক সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। তুষার বিশ্বাসের নামে তার কাছ থেকে একটি ভুয়ো আধার কার্ড উদ্ধার হয়েছে। অন্যজনের নাম রিয়াজুল ইসলাম ওরফে সুমন। এর বয়স ২৫ বছর। তৃতীয়জন অস্ত্র ব্যবসায়ী বলে মনে করছে এসটিএফ। সে বসিরহাটের বাসিন্দা। নাম মনতোষ দে ওরফে মনাদা। বয়স ৪৬। এই মনতোষের কাছেই অস্ত্র কিনতে এসেছিল ২ জন। ২ বাংলাদেশি ইতিমধ্যেই এসটিএফের কাছে স্বীকার করেছে তারা বেআইনিভাবে ভারতে প্রবেশ করে। তাদের কাছ থেকে ল্যাপটপ, পেনড্রাইভ ছাড়াও প্রচুর কাগজ উদ্ধার হয়েছে। যার বড় অংশই অলকায়দার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এছাড়া আলকায়দার বার করা বিস্ফোরক কীভাবে বানাতে হয় তার বই, কীভাবে কোনও জায়গা রেইকি করতে হয় তার বই, ধর্মীয় ভাষণের বই উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে প্রচুর কাগজ। যা খতিয়ে দেখছে এসটিএফ। এছাড়া তাদের কাছে একগুচ্ছ ভিজিটিং কার্ড মিলেছে, যেগুলি প্রত্যেকটিই কোনও না কোনও রাসায়নিক বিক্রির দোকানের। তাছাড়া কলকাতার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গার নাম লেখা একটি কাগজও উদ্ধার হয়েছে।
তবে এদের পরিকল্পনা কী ছিল, কেন তারা কলকাতায় লুকিয়ে ছিল, আলকায়দার তরফে কোনও পরিকল্পনা ছিল কিনা, কোনও নাশকতা চালাতে এখানে এসেছিল কিনা এসব সম্বন্ধে এখনও অন্ধকারে এসটিএফ। কয়েকঘণ্টা হল ধরা পড়েছে। তাই সব কিছু জানা এর মধ্যে সম্ভব না হলেও ধৃতদের জেরা করে এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হবে বলে এসটিএফের তরফে জানান ও ধৃত ৩ জনের ছবিও এদিন সকলের সামনে তুলে ধরেন এসটিএফের ডিসি মুরলীধর শর্মা।