Mythology

কুম্ভমেলা কেন হয়, কখন হয়, কি তার মাহাত্ম্য

একটানা তিনদিন ছোটার পর জয়ন্ত এক একটি জায়গায় উপস্থিত হয়েছিলেন এবং ফিরে এসেছিলেন বারোদিন পরে। মানুষের এক বছর দেবতাদের কাছে একদিন মাত্র।

একথা নতুন কোনও কথা নয়। বলা কথা আবার নতুন করে বলা। এ কথা পুরাণের কথা। দেবরাজ ইন্দ্রের তপস্যায় প্রীত হলেন নারায়ণ। সিন্ধু কন্যা রূপে লক্ষ্মী দেবীকে জন্মগ্রহণ করতে আদেশ দিলেন তিনি। তারপর দেবতাদের নিয়ে সমুদ্র মন্থন করতে বললেন পিতামহ ব্রহ্মাকে। এ বিশাল কাজ শুধু দেবতাদের পক্ষে করা কিছুতেই সম্ভব নয় বলে সঙ্গে অসুরদেরও নিতে বললেন। মন্থন শেষ হলে দেবী লক্ষ্মী আর ধন্বন্তরি উঠে আসবেন সমুদ্র থেকে। দেবতাদের বৈদ্য ধন্বন্তরি। তিনিই আসবেন অমৃতের কুম্ভ নিয়ে। কথা হল, মন্থনে যা কিছু সম্পদ উঠবে তা সমানভাবে ভাগ করে নেবেন দেবতা ও অসুরেরা।

Kumbh Mela
প্রয়াগরাজে পুণ্যার্থীরা নৌকায় করে যাচ্ছেন ত্রিবেণীসঙ্গমের দিকে

সমুদ্র মন্থন শুরু হল। এবার ধীরে ধীরে দেব-বৈদ্য ধন্বন্তরি উঠে এলেন অমৃত ভরা কুম্ভ নিয়ে। দেবতাদের পরমধন অমৃত কুম্ভের কথা জানতেন ইন্দ্র। ওই কুম্ভ যাতে দেবতাদের হাতছাড়া না হয়, অসুরদের হাতে না পড়ে, তার জন্য দেব-বৈদ্যের কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে পালাতে বললেন পুত্র জয়ন্তকে। পিতা ইন্দ্রের আদেশ পাওয়া মাত্রই অমৃত ভরা কুম্ভ নিয়ে ছুটতে লাগলেন জয়ন্ত। সমুদ্র মন্থনের একমাত্র সার বস্তুই যে অমৃত, যা পান করলে অমরত্ব লাভ করা যায়।


অসুর গুরু শুক্রাচার্য ব্যাপারটা লক্ষ করে অসুরদের আদেশ দিলেন জয়ন্তকে ধরতে। আগে জয়ন্ত ছুটছেন অমৃত কুম্ভ নিয়ে- পিছনে ছুটছে অসুররা। এইভাবে সমানে তিনদিন ছোটার পর একটু বিশ্রামের প্রয়োজন ভেবে জয়ন্ত বিশ্রাম নিতে বসলেন অমৃত কুম্ভটি মাটিতে রেখে। দেখলেন অসুররা এসে পড়েছে। আবার ছুটতে শুরু করলেন ইন্দ্রপুত্র। টানা তিনদিন ছুটে বসলেন বিশ্রাম নিতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই হাজির হলেন অসুররা। আবার কুম্ভ নিয়ে ছুটতে লাগলেন জয়ন্ত। এইভাবে জয়ন্ত তিনদিন পরে পরে অমৃতপূর্ণ কুম্ভ নামিয়ে রেখেছিলেন চার জায়গায় এবং বারোদিন পরে ফিরে এলেন সমুদ্র মন্থন ক্ষেত্রে। কুম্ভ নিয়ে পালানোর সময় জয়ন্ত হরিদ্বার, প্রয়াগ, নাসিক আর উজ্জয়িনীতে অমৃত কুম্ভ নামিয়ে রেখে বিশ্রাম করেছিলেন। কুম্ভ নামানোর সময় কয়েক ফোঁটা পড়েছিল হরিদ্বার ও প্রয়াগে।

Kumbh Mela
আপনভোলা এক সাধুবাবা

একটানা তিনদিন ছোটার পর জয়ন্ত এক একটি জায়গায় উপস্থিত হয়েছিলেন এবং ফিরে এসেছিলেন বারোদিন পরে। মানুষের এক বছর দেবতাদের কাছে একদিন মাত্র। সে জন্য প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর চার জায়গায় কুম্ভমেলা হয়, গড়ে পূর্ণ কুম্ভ হয় বারো বছর পরে। হরিদ্বার আর প্রয়াগে পূর্ণ অমৃত কুম্ভ হয় এই দু-জায়গায় কয়েক ফোঁটা অমৃত পড়েছিল বলে।


Kumbh Mela
তাঁবুতে বসে আছেন এক সাধুবাবা

কুম্ভযোগে স্নানে ফললাভের কথায় পুরাণ বলেছেন, ‘কার্তিকে সহস্র বার, মাঘ মাসে শতবার গঙ্গাস্নানে এবং বৈশাখ মাসে কোটি নর্মদা স্নানে যে ফললাভ হয়, সহস্র অশ্বমেধ যজ্ঞ ও শত বাজপেয় যজ্ঞে যে ফললাভ হয়, লক্ষ পৃথিবী প্রদক্ষিণ করলে যে ফললাভ হয়, একবার কুম্ভ স্নানেই তা পাওয়া যায়।’

সাধু সন্ন্যাসী মহাপুরুষ ও গৃহীদের অমৃত প্রাপ্তির মেলা হয় কুম্ভমেলা। ভারতের চারটি স্থানে বারো বছর অন্তর পূর্ণ কুম্ভ অনুষ্ঠিত হয় এই যোগে –

বৃহস্পতি মেষ রাশিতে এবং রবির সঙ্গে চন্দ্র মকর রাশিতে মিলন সময়ে অমাবস্যা তিথিতে তীর্থরাজ প্রয়াগে পূর্ণকুম্ভ যোগ উপস্থিত হয়।

Kumbh Mela
প্রয়াগরাজে কুম্ভস্নানের পথে মহন্তরা

কর্কট রাশিতে বৃহস্পতির সঙ্গে রবি ও চন্দ্রের মিলনে অমাবস্যা তিথিতে কুম্ভযোগ হয় নাসিকে গোদাবরী তটে। ভাদ্র মাসের অমাবস্যায় দ্বিতীয় স্নান আর কার্তিক মাসের শুক্লা একাদশীতে হয় তৃতীয় স্নান।

তুলা রাশিতে বৃহস্পতি,রবি ও চন্দ্রের অবস্থানকালে অমাবস্যা তিথিতে উজ্জয়িনীর শিপ্রাতটে মুক্তিপ্রদ কুম্ভ যোগ হয়।

Kumbh Mela
বৃদ্ধ বাবাকে পিঠে করে নিয়ে চলেছেন কুম্ভস্নানের উদ্দেশে

বৃহস্পতি কুম্ভ রাশিতে এবং মহাবিষুব সংক্রান্তি অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তিতে রবির সঙ্গে মেষ রাশির মিলনে হরিদ্বারে অমৃত কুম্ভযোগ হয়। হিউয়েন সাঙ এই সময়ের গঙ্গাকে ‘মহাভদ্র’ বলেছেন।

দেবতাদের সঙ্গে অসুরদের সংগ্রাম সময়ে অমৃত ভরা কুম্ভটি রক্ষায় বিশেষ যত্নবান ও তৎপর ছিলেন সূর্যদেব, সোমদেব(চন্দ্র) এবং দেবগুরু বৃহস্পতি। প্রতি বারো বছর অন্তর বিশেষ রাশিতে এ তিনের সংযোগে, বিশেষ তিথিতে অবস্থান সময়ে কুম্ভযোগ হয়।

Kumbh Mela
আর্শিবাদপ্রার্থী এক গৃহী

অতীতে কোনও এক সময় সর্ব প্রথম কোন সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসীরা আগে কুম্ভ স্নান করবে তা নির্ধারিত হত তরবারি দিয়ে। তখন স্নান করার ক্রম নির্ধারিত হত এইভাবে, মহানির্বাণী, নিরঞ্জনী, জুনা, অটল, আনন্দ, আহ্বান এবং অগ্নিদামক- এই সাত আখড়ার সন্ন্যাসীদের মধ্যে পরস্পর লড়াই করত কে আগে স্নান করবে। এই রক্তারক্তির ব্যাপারটায় প্রথম হস্তক্ষেপ করে ইংরেজ সরকার। বিভিন্ন আখড়ার স্নানের ক্রম নির্ধারণ করে দিয়েছিল তৎকালীন সরকার।

Kumbh Mela
প্রয়াগরাজে অগণিত পুণ্যার্থী

কুম্ভ পর্বে আখড়ার সন্ন্যাসীদের স্নানের ব্যবস্থা করা হয় সবার আগে। বিভিন্ন আখড়ার স্নানের পরে বৈরাগী, উদাসীন এবং নির্মল সম্প্রদায়ের সাধু সন্ন্যাসীরা, তারপরে মুখ্য স্নান করবে সাধারণ পুণ্যার্থী ও তীর্থযাত্রীরা।

ইংরেজ আমলে কুম্ভ পর্বে স্নানের ক্রম নির্ধারিত হয় এইভাবে, প্রয়াগে সর্ব প্রথম স্নানে যাবে মহানির্বাণী আখড়ার নাথ সম্প্রদায়ের নিজের সহযোগী আখড়া অটলের সঙ্গে। এরপর এক সঙ্গে স্নান করবে নিরঞ্জনী ও আনন্দ আখড়া। তৃতীয় ক্রমে জুনা ও অগ্নি আখড়া। তারপর স্নান করবে অন্য সম্প্রদায়ের সাধু সন্ন্যাসী এবং সাধারণ তীর্থযাত্রীরা।

Kumbh Mela
সাধুমহন্তদের সুসজ্জিত অস্ত্র রাখা

হরিদ্বারের কুম্ভ পর্বে প্রথমে নিরঞ্জনী আখড়ার মহামণ্ডলেশ্বর সহ তাঁর সঙ্গী আনন্দ আখড়াকে নিয়ে স্নান করবে। দ্বিতীয় ক্রমে জুনা, আহ্বান এবং অগ্নি আখড়া এক সঙ্গে, তৃতীয় ক্রমে স্নান করবে মহানির্বাণী আখড়া তাঁর সহযোগী আখড়াসহ। তারপর অন্যান্য সাধু সম্প্রদায় ও পুণ্যার্থীরা।

Kumbh Mela
কুম্ভদর্শনের আনন্দে উদ্বেল বামন সাধুবাবা

উজ্জয়িনীর কুম্ভ পর্বে নির্ধারিত হয় সন্ন্যাসীদের সমস্ত আখড়া স্নান করবে এক সঙ্গে। তবে মহানির্বাণী ও নিরঞ্জনী একসঙ্গে, জুনা আখড়া তার সহযোগী আখড়াকে নিয়ে স্নানে যায় একসঙ্গে। কিন্তু স্নান করার পর জুনা আখড়া থেকে যায়। মহানির্বাণী ও নিরঞ্জনী আখড়া নিজেদের সঙ্গী আখড়ার সন্ন্যাসীদের নিয়ে ফিরে যায় নিজের নিজের তাঁবুতে। একসঙ্গে স্নান করলেও সবার শেষ তাঁবুতে ফেরে জুনা আখড়ার নাগা সন্ন্যাসীরা।

নাসিকে গোদাবরী কুম্ভ পর্বে সবার প্রথমে সেখানে স্নান করে জুনা আখড়া। তারপর নিরঞ্জনী এবং শেষ স্নান করে মহানির্বাণী। তবে বিভিন্ন আখড়ার মহামণ্ডলেশ্বরদের স্নানের জন্য আলাদাভাবে কোনও সময় নির্দিষ্ট করা হয়নি। তারা স্নান করে নিজ নিজ আখড়ার সঙ্গে।

সেই ইংরেজের আমল থেকে এই অলিখিত নিয়ম আজও পালিত হয়ে আসছে ভারতের সন্ন্যাসী সমাজে। এসব কথা শুনেছি ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে হরিদ্বারের পূর্ণ কুম্ভে শ্রীপঞ্চ দিগম্বরী আখড়ার শ্রী মহন্ত শ্রী রামচন্দ্র পরমহংস দাসজির মুখে।

Kumbh Mela
আর্শিবাদরত সাধুবাবা

কুম্ভমেলায় ভারতের দিকদিগন্ত থেকে যেমন আসেন লক্ষ লক্ষ সাধুসন্তেরা তেমনই আসেন অগণিত ধর্মপ্রাণ গৃহস্থ নরনারী। পুণ্য স্নান শেষ করে তারা দলে দলে উপস্থিত হন উচ্চ কোটি মহাপুরুষদের ছাউনিতে। আকাশ বাতাস অনুরণিত হয়ে ওঠে ভক্তকণ্ঠে ভগবানের জয়ধ্বনিতে।

Kumbh Mela
সপার্ষদ সাধুবাবা

নানা সময়ে প্রয়াগের ত্রিবেণী সঙ্গম ঘাট পূত হয়েছে অসংখ্য মহাপুরুষের চরণধূলিতে। এক সময় নর্মদা তটের মার্কণ্ডেয় আশ্রমে আট বছর অবস্থানের পর আত্মজ্ঞানী মহাপুরুষ ত্রৈলঙ্গস্বামী প্রয়াগের ত্রিবেণী সঙ্গম ঘাটের মাটি পবিত্র করেছিলেন ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে।

১৩০০ বঙ্গাব্দের কথা। প্রয়াগ সঙ্গমে চলছে কুম্ভমেলা। অসংখ্য সাধুসন্ন্যাসীদের জমায়েত ও ছাউনির মধ্যে পুণ্যময় মেলা ক্ষেত্রে এসেছিলেন তৎকালীন কলকাতা হাইকোর্টের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আইনজীবী তারাকিশোর চৌধুরী। উত্তরকালেও তিনি এসেছিলেন প্রয়াগের কুম্ভে। তখন তাঁর পরিচয় শ্রীমহন্ত শ্রীশ্রী ১০৮ স্বামী শ্রীসন্তদাস কাঠিয়া বাবাজি মহারাজ নামে।

Kumbh Mela
দিনের আলোয় ঝলমল করছে ত্রিবেণীসঙ্গম

১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে প্রয়াগের কুম্ভমেলা-অঙ্গনে লক্ষ লক্ষ তীর্থকামী নরনারী ও সাধু সন্ন্যাসীদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিরাট ধর্মমেলার অন্যতম আকর্ষণ তেজপুঞ্জকলেবর মূর্তি ভোলাগিরি মহারাজের সহায়তায় বিশেষ স্বীকৃতি মেলে প্রভুপাদ বিজয় কৃষ্ণের।

ওই বছরের মেলায় উচ্চ কোটি সাধু সন্ন্যাসীদের মধ্যে ছিলেন নরসিংহদাসজি, মৌনী বাবা, অমরেশ্বরানন্দ পুরী, অর্জুন দাস বাবাজি প্রমুখ অসংখ্য মহাপুরুষ।

একবার প্রয়াগের কুম্ভমেলায় বৈষ্ণব নাগা সাধুর দল যোগী ও সন্ন্যাসীদের উপর আক্রমণ করে। প্রবল দাঙ্গায় রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটে যায়। যোগী সম্প্রদায়ের অন্যতম যোগীবর গম্ভীরনাথ আপন ছাউনিতে ছিলেন ধ্যানমগ্ন। মারমুখী নাগারা ঢুকে পড়ে তাঁর ছাউনিতে। সম্বিৎ ফিরে আসে যোগীবরের। যোগবলে ঘটে যায় এক অলৌকিক কাণ্ড। মুহুর্তে উত্তেজিত নাগারা শান্ত হয়ে যায়। লাঠি চিমটে নামিয়ে ফিরে যায় যে যার তাঁবুতে।

১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে প্রয়াগের অর্ধকুম্ভে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন যোগীবর গম্ভীরনাথের শিষ্য ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা যোগীবর শ্রীমৎ স্বামী প্রণবানন্দজি মহারাজ। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের অর্ধকুম্ভেও ছিলেন স্বামীজি।

Kumbh Mela
পুণ্যার্থীরা নৌকায় করে যাচ্ছেন ত্রিবেণীসঙ্গমের উদ্দেশে

প্রয়াগের কুম্ভে বিভিন্ন বছরে একাধিকবার উপস্থিত হয়ে অগণিত মহাপুরুষ সাধক সন্ন্যাসী ও গৃহী নরনারীদের পরম আদরণীয় হয়েছিলেন উচ্চকোটি সাধিকা শ্রীশ্রী আনন্দময়ী মাতাজি।

১৩৩০ বঙ্গাব্দের কথা। পূর্ণ কুম্ভের মেলা চলছে প্রয়াগে। মেলায় উপস্থিত ছিলেন সাধক পরমহংস দয়ালদাস বাবাজি মহারাজ। সেবার বাবাজির খাদ্য ভাণ্ডার ছিল অফুরন্ত। হাজার হাজার সাধু সন্ন্যাসী ও তীর্থকামীদের অন্ন ভোজন করিয়েছিলেন প্রতিদিন ছাউনির একপাশে জোড় হাতে দাঁড়িয়ে থেকে।

Kumbh Mela
ধুনির সামনে আর্শিবাদরত সাধুবাবা

১৮৯০ খ্রিস্টাব্দের কুম্ভমেলায় যোগদান করেছিলেন সন্ন্যাসী শিরোমণি স্বামী বিশুদ্ধানন্দ সরস্বতী। এই ধর্মমেলায় যোগদান স্বামীজির জীবনের এক অবিস্মরণীয় উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ব্রহ্মবিদ মহাপুরুষ বিশুদ্ধানন্দ প্রতিভাত হন দর্শনীয় পুরুষ হিসাবে। অগণিত আর্ত-ভক্তরা আনন্দ সাগরে নিমজ্জিত হয়েছিলেন স্বামীজির করুণা প্রসাদ লাভ করে।

১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেছিলেন শক্তিশালী প্রচ্ছন্ন মহাপুরুষ পওহারি বাবা। তিনি দীর্ঘকাল অতিবাহিত করেছিলেন সূর্যালোকবিহীন এক ধ্যান গুহায়। ফলে তাঁর শুদ্ধ দেহটি হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো কোমল, রঙ হয় তুষারের মতো ধবধবে সাদা। এই অবস্থায় তিনি প্রয়াগের কাছে ত্রিবেণীর বালুচরে বেঁধেছিলেন এক পর্ণকুটির। একমাত্র মাঘমেলা উপলক্ষেই তিনি গিয়েছিলেন প্রয়াগে।

উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে জন্ম মহাত্মা হংসবাবা অবধূতের। নাসিক হরিদ্বার প্রয়াগ প্রভৃতি প্রত্যেকটি কুম্ভমেলাক্ষেত্রে উপস্থিত থাকতেন তিনি বহু ভক্ত পরিবেষ্টিত হয়ে। তাঁর আখড়ায় সমাগম হত বহু শক্তিধর ও প্রবীণ সন্ন্যাসী মহাপুরুষদের। তাঁরা প্রত্যেকেই হংসবাবাকে দেখতেন শ্রদ্ধার চোখে, যথাযোগ্য মর্যাদা দিতেন ব্রহ্মবিদ মহাপুরুষরূপে।

Kumbh Mela
কুম্ভস্নানে এসে বিশ্রামরত লাখো তীর্থযাত্রী

আনুমানিক দশম শতাব্দীতে জন্মগ্রহণ করেন মহাযোগী গোরখনাথ। তাঁরও পদধূলি পড়েছিল প্রয়াগে। এক সময় তিনিও ত্রিবেণীতে সমাপন করেছিলেন স্নান ও পূজাদি। এইভাবে শত শত বছর ধরে অগণিত সাধক যোগী মহাপুরুষের পদধূলিতে পূত হয়েছে প্রয়াগের প্রতিটি ধূলিকণা। একই সঙ্গে গঙ্গার মাহাত্ম্য বর্ণনাকালেও এসেছে প্রয়াগের কথা। তীর্থ মাহাত্ম্য প্রসঙ্গে ঋষিশ্রেষ্ঠ পুলস্ত পৌরাণিক গঙ্গাদ্বার তথা আজকের হরিদ্বারের গঙ্গা তীরে বসে বলেছিলেন, নিষ্পাপ কুরুশ্রেষ্ঠ মহামতি ভীষ্মকে, ‘কুরুনন্দন! যেখানে সেখানে অবগাহন করা হউক না কেন, সর্বত্রই গঙ্গা কুরুক্ষেত্রের তুল্য, কিন্তু গঙ্গা কনখলে (হরিদ্বারে) বিশেষ তীর্থ এবং প্রয়াগে অতি মহাতীর্থ।।…

পুষ্কর, কুরুক্ষেত্র, গঙ্গা এবং প্রয়াগাদি মধ্যবর্তী তীর্থে স্নান করিয়া মানুষ ঊর্ধ্বে সাত পুরুষ এবং নিম্নে সাতপুরুষকে উদ্ধার করে।।’ (মহাভারত, বন পর্ব, সপ্ততিত মোহধ্যায়ঃ।)

Kumbh Mela
কাঁধে চেপে কুম্ভস্নানে চলেছে ছোট্ট শিশুও

প্রয়াগ-এ সেই তীর্থ, যাকে বলা যায় মহাভারতের মহামানবের মহামিলন ক্ষেত্র। এখানে, এই প্রয়াগেই অজ্ঞাত কোনও কাল থেকে মহাকুম্ভে আজও সাধুসন্ন্যাসী, শৈব, শাক্ত, বৈষ্ণব, সৌর, বৈরাগী, নাগা, গাণপত্য, আউল, বাউল, পরমহংস, দণ্ডী, অবধূত, রামায়েৎ, বৌদ্ধ, জৈন – সকলের মিলিত ঐকতান ‘বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান।’

ভক্তের সঙ্গে ভগবানের অবাধ মিলনক্ষেত্র এই ভরা অমৃতের প্রয়াগ। ছোট বড়, ধনী নির্ধন ভেদ নেই এখানে, নেই প্রাদেশিকতার গণ্ডী, আছে সাম্যের এক অপূর্ব মিলন এই অমৃতকুম্ভের প্রয়াগে, অমৃত ভরা কুম্ভে-কুম্ভমেলায়।

(ছবি – শিবশংকর ভারতী)

Show Full Article

2 Comments

  1. জাহান্নামই সর্বোত্তম আবাসস্থ।ওম অপেক্ষা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button