কুম্ভস্নানের আগে রক্তারক্তি থামাল ইংরেজ সরকার, এক অজানা ইতিহাস – শিবশংকর ভারতী
অতীতে কোনও এক সময় সর্ব প্রথম কোন সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসীরা আগে কুম্ভ স্নান করবে তা নির্ধারিত হত তরবারি দিয়ে।
অতীতে কোনও এক সময় সর্ব প্রথম কোন সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসীরা আগে কুম্ভ স্নান করবে তা নির্ধারিত হত তরবারি দিয়ে। তখন স্নান করার ক্রম নির্ধারিত হত এইভাবে, মহানির্বাণী, নিরঞ্জনী, জুনা, অটল, আনন্দ, আহ্বান এবং অগ্নিদামক- এই সাত আখড়ার সন্ন্যাসীদের মধ্যে পরস্পর লড়াই করত কে আগে স্নান করবে। এই রক্তারক্তির ব্যাপারটায় প্রথম হস্তক্ষেপ করে ইংরেজ সরকার। বিভিন্ন আখড়ার স্নানের ক্রম নির্ধারণ করে দিয়েছিল তৎকালীন সরকার।
কুম্ভ পর্বে আখড়ার সন্ন্যাসীদের স্নানের ব্যবস্থা করা হয় সবার আগে। বিভিন্ন আখড়ার স্নানের পরে বৈরাগী, উদাসীন এবং নির্মল সম্প্রদায়ের সাধু সন্ন্যাসীরা, তারপরে মুখ্য স্নান করবে সাধারণ পুণ্যার্থী ও তীর্থযাত্রীরা।
ইংরেজ আমলে কুম্ভ পর্বে স্নানের ক্রম নির্ধারিত হয় এইভাবে, প্রয়াগে সর্ব প্রথম স্নানে যাবে মহানির্বাণী আখড়ার নাথ সম্প্রদায়ের নিজের সহযোগী আখড়া অটলের সঙ্গে। এরপর এক সঙ্গে স্নান করবে নিরঞ্জনী ও আনন্দ আখড়া। তৃতীয় ক্রমে জুনা ও অগ্নি আখড়া। তারপর স্নান করবে অন্য সম্প্রদায়ের সাধু সন্ন্যাসী এবং সাধারণ তীর্থযাত্রীরা।
হরিদ্বারের কুম্ভ পর্বে প্রথমে নিরঞ্জনী আখড়ার মহামণ্ডলেশ্বর সহ তাঁর সঙ্গী আনন্দ আখড়াকে নিয়ে স্নান করবে। দ্বিতীয় ক্রমে জুনা, আহ্বান এবং অগ্নি আখড়া এক সঙ্গে, তৃতীয় ক্রমে স্নান করবে মহানির্বাণী আখড়া তাঁর সহযোগী আখড়াসহ। তারপর অন্যান্য সাধু সম্প্রদায় ও পুণ্যার্থীরা।
উজ্জয়িনীর কুম্ভ পর্বে নির্ধারিত হয় সন্ন্যাসীদের সমস্ত আখড়া স্নান করবে এক সঙ্গে। তবে মহানির্বাণী ও নিরঞ্জনী একসঙ্গে, জুনা আখড়া তার সহযোগী আখড়াকে নিয়ে স্নানে যায় একসঙ্গে। কিন্তু স্নান করার পর জুনা আখড়া থেকে যায়। মহানির্বাণী ও নিরঞ্জনী আখড়া নিজেদের সঙ্গী আখড়ার সন্ন্যাসীদের নিয়ে ফিরে যায় নিজের নিজের তাঁবুতে। একসঙ্গে স্নান করলেও সবার শেষ তাঁবুতে ফেরে জুনা আখড়ার নাগা সন্ন্যাসীরা।
নাসিকে গোদাবরী কুম্ভ পর্বে সবার প্রথমে সেখানে স্নান করে জুনা আখড়া। তারপর নিরঞ্জনী এবং শেষ স্নান করে মহানির্বাণী। তবে বিভিন্ন আখড়ার মহামণ্ডলেশ্বরদের স্নানের জন্য আলাদাভাবে কোনও সময় নির্দিষ্ট করা হয়নি। তারা স্নান করে নিজ নিজ আখড়ার সঙ্গে।
সেই ইংরেজের আমল থেকে এই অলিখিত নিয়ম আজও পালিত হয়ে আসছে ভারতের সন্ন্যাসী সমাজে। এসব কথা শুনেছি ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে হরিদ্বারের পূর্ণ কুম্ভে শ্রীপঞ্চ দিগম্বরী আখড়ার শ্রী মহন্ত শ্রী রামচন্দ্র পরমহংস দাসজির মুখে।
(ছবি – শিবশংকর ভারতী)