কখনও তিনি ধনলক্ষ্মী। কখনও ধান্যলক্ষ্মী। কখনও বা গজলক্ষ্মী। আবার কখনও বা বিদ্যালক্ষ্মী। ঐশ্বর্য, সৌভাগ্য ও সৌন্দর্যের দেবী হিসাবে লক্ষ্মী বহু রূপে পূজিতা হন। বছরের ২টি দিনে হিন্দুদের মধ্যে লক্ষ্মীপুজোর রীতি প্রচলিত। কোজাগরী ও দীপাবলি। বাংলায় এই দুই দিনের মধ্যে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর চল বেশি। বুধবার সেই কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। বারোয়ারিতে দুর্গাপুজোর ভাঙা প্যান্ডেলেই কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো হয়ে থাকে। আবার বিভিন্ন পরিবারে এই পুজো দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। বাড়ি বাড়িতে সকাল থেকেই শুরু হয়েছে তারই তোড়জোড়। আলপনা দেওয়া, লক্ষ্মী সাজানো, ঘর সাজানো, অতিথি আপ্যায়ন, পুজোর জোগাড়ে ব্যস্ত বাড়ির মহিলারা। এসো মা লক্ষ্মী বোসো ঘরে…। এই বাংলা গানের কলির সঙ্গে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো কোথায় যেন একাকার হয়ে গেছে।
এদিকে লক্ষ্মী পুজোকে কেন্দ্র করে বাজার আগুন। ফুল, ফল থেকে শাক-সবজি, সবই বিকচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ দামে। অবশ্য শুধু এ বছর বলেই নয়, ফি বছর সেই একই ছবি, একই অভিযোগ।
বাজার অগ্নিমূল্য। তবু বছরের এই একটা দিনে বাজেটের কথা ভুলে মানুষ মেতে ওঠেন পুজোর আনন্দে। সন্ধে নামলেই ঘরে ঘরে শুরু হয়ে যায় লক্ষ্মীর আরাধনা।
এক এক পরিবারের আবার এক এক রীতি। কোথাও লক্ষ্মী পূজিতা হন ফোঁপল, চিঁড়ে, মুড়কি, নারকেল, নাড়ু ও মিষ্টি সহযোগে।
কোথাও আবার প্রতিমার জন্য ধানের শিষ আবশ্যিক। হাতে থাকে ঝাঁপি। অনেক বাড়িতে রাতে ভুনা খিচুড়ির সঙ্গে লাবড়া, মিষ্টি ভোগ হিসাবে খাওয়ানো হয়। সব মিলিয়ে এদিন রাতটা লক্ষ্মী আরাধনায় মেতে থাকছে বঙ্গবাসী।
লক্ষ্মীদেবী কিন্তু নানা রূপে পূজিতা হন। দক্ষিণ ভারতে অষ্টলক্ষ্মী পুজোর রীতি আছে। সেখানে লক্ষ্মীর আটটি রূপ। লক্ষ্মীর প্রথম রূপ হিসাবে পূজিতা হন আদিলক্ষ্মী, ঐশ্বর্যের দেবী হিসাবে ধনলক্ষ্মী, উর্বরতা-বৃষ্টি-খাদ্যের দেবী হিসাবে গজলক্ষ্মী, ধৈর্যের দেবী হিসাবে ধৈর্যলক্ষ্মী, বংশ পরম্পরার দেবী হিসাবে সন্তানলক্ষ্মী, জয়লাভের দেবী হিসাবে বিজয়লক্ষ্মী, জ্ঞানের দেবী হিসাবে বিদ্যালক্ষ্মী ও শস্যের দেবী হিসাবে পূজিতা হন ধান্যলক্ষ্মী। আবার নেপালে লক্ষ্মীর ১৬টি হাত। প্রতিটি হাতে এক একটি মুদ্রা। এখানে তিনি মহালক্ষ্মী। জৈনমন্দির ও বৌদ্ধস্তূপেও লক্ষ্মীর মূর্তি দেবী হিসাবে পূজিতা হন। জৈনদের ধর্মীয় গ্রন্থ কল্প সূত্রতে লক্ষ্মীর বর্ণনা আছে। জাপানেও লক্ষ্মীপুজো হয়। দেবী কিশিজোতেন জাপানবাসীর কাছে ঐশ্বর্য, সৌভাগ্য ও সৌন্দর্যের দেবী হিসাবে পূজিতা হন।