Lifestyle

জিলিপি নিয়ে কাদামাটিতে মাখামাখি হওয়া এই উৎসবের মূল আকর্ষণ তার শেষ খেলা

ক্লাইম্যাক্স শব্দটার সঙ্গে টানটান শব্দটা খুব মানানসই। এই উৎসবের শুরু থেকে শেষ পুরোটাই টানটান। কাদামাটি, জিলিপি, লাড্ডু, হাঁড়ি সব মিলিয়ে শুধুই মজা।

স্পেনের টোমাটিনা উৎসব তো সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত। ভারতের হোলিও পরিচিতিতে কম যায়না। এমন সব উৎসব যেখানে প্রাথমিক শর্তই হল মানুষে মানুষে মাখামাখি। যার মধ্যে আছে শুধুই আনন্দ।

কিন্তু এমন উৎসব তখনই সকলের নজর কাড়ে যখন তা ঠিকঠাক প্রচারও পায়। কিন্তু প্রচারের অন্তরালে এই সমান বা তার চেয়েও হয়তো একটু বেশি আনন্দে ভরা এমন এক মাখামাখি উৎসব হল চিকাল কালো।


নামটা অনেকের কাছেই অচেনা। কিন্তু এই উৎসবের কথা পুরোটা জানলে কিন্তু তাঁরা হয়তো টিকিট কেটে পৌঁছে যাবেন উৎসব প্রাঙ্গণে। উৎসবের শুরু হয় গ্রামের দেবকী কৃষ্ণ মন্দিরের সামনের অতিপ্রাচীন অশ্বত্থ গাছের সামনের বিশাল মাঠে।

এ মাঠ আষাঢ় মাসে বৃষ্টির জলে মোটা কাদামাটিতে ভরা থাকে। এখানেই উপস্থিত হন গ্রামের বালক থেকে তরুণ, যুবক, মধ্য বয়সী এমনকি বৃদ্ধরাও। সকলের পরনে থাকে ছোট একটি প্যান্ট। বাকি দেহ খালি।


এবার অশ্বত্থ গাছের বেদী থেকে বয়স্করা জিলিপি ও লাড্ডু ছুঁড়তে থাকেন। যা ধরার জন্য ওই খালি গায়ের পুরুষরা হুড়োহুড়ি লাগিয়ে দেন।

এঁদের সকলকে তেল মাখানোর রীতি রয়েছে। এই তেল বিনামূল্যে সকলকে মাখান এই গ্রামের একটি দোকানের মালিক। তেল মেখে মন্দিরটি পরিক্রমা করেন সকলে। এরপর সকলকে নানা রকম খাবার পরিবেশন করা হয়। জিলিপি, লাড্ডু, পুরী সহ নানা খাবার।

এবার কাদামাটি ভরা মাঠে উপস্থিত হয়ে শুরু হয় খেলা। প্রথমেই এক এক করে সকলকে অন্যরা তুলে কাদামাটির মধ্যে ছুঁড়ে দেন। সকলে মাখামাখি হয়ে যান কাদায়। বাজতে থাকে স্থানীয় বাদ্য।

এবার এক এক করে খেলা চলতে থাকে। যাকে বাংলায় কানামাছি খেলা বলে সেই খেলা। তারপর গোল হয়ে দাঁড়িয়ে চক্র খেলা। তারপর দড়ি টানাটানি, কাবাডি সবই চলতে থাকে।

গায়ে কাদামাটি মাখামাখি হয়ে এসব খেলায় অংশ নেন গ্রামের সব বয়সের পুরুষ। গোয়ার মার্সেল নামে একটি গ্রামে এই কাদামাটির উৎসব সবচেয়ে জনপ্রিয়। সেখানেই এই কাবাডির পর আসে শেষ খেলা। যা জন্মাষ্টমী উপলক্ষে হওয়া দহিহাণ্ডি ছাড়া আর কিছুই নয়।

এই উৎসব যেহেতু শ্রীকৃষ্ণের বাল্যকালকে সামনে রেখে চলে আসছে, অর্থাৎ এখানে কাদামাটি মাখা সব বয়সের পুরুষ ওইদিন হয়ে ওঠেন দুষ্টুমিভরা বালক কৃষ্ণ। ব্রজ ভূমি জুড়ে বালক কৃষ্ণের দুষ্টুমির মতই দিনভর তাঁরা এই কাদামাটি নিয়ে দুষ্টুমি করতে থাকেন। শেষে সকলে পিরামিডের মত করে উঁচুতে ঝোলানো দহিহাণ্ডি ভেঙে খেলা শেষ করেন।

গোয়ার একদম নিজস্ব এই খেলা কিন্তু তার বৈচিত্র্যে কম নয়। হয়তো প্রচারের আলো থেকে অনেক দূরে থাকায় ভারতেরই বহু মানুষের জানা নেই গোয়ার এই আষাঢ় মাসের সুন্দর উৎসবের কথা।

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button