১৯৭৪ সালে রিলিজ হওয়া বিখ্যাত হলিউড সিনেমা ‘দ্যা টাওয়ারিং ইনফার্নো’-র কথা মনে পড়ে? যেখানে একটি আকাশচুম্বী অট্টালিকার উদ্বোধনের দিনই বাড়িটিতে আগুন লেগে যায়। রোমহর্ষক সেই টানটান ছবি সারা বিশ্বে সাড়া ফেলেছিল। কিন্তু সে ছিল রুপোলী পর্দার একটি কাহিনি মাত্র। কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা বাস্তবে যে কতটা ভয়ংকর তা বুঝলেন পশ্চিম লন্ডনের নর্থ কেনসিংটন এলাকার ২৪ তলা গ্রেনফিল টাওয়ারের বাসিন্দারা।
১৯৭৪ সালে লন্ডনের বর্ধিষ্ণু এই এলাকায় তৈরি হয় অ্যাপার্টমেন্টটি। গত রাতে ১২০টি ফ্ল্যাট সম্বলিত টাওয়ারের দোতলায় প্রথম আগুন লাগে। কীভাবে আগুন তা স্পষ্ট না হলেও রাত দেড়টার সময় তখন কার্যত সব বাসিন্দাই ঘুমে আচ্ছন্ন। বাড়িটিতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও বেশ গোছানো। ফলে আগুন লাগার পর বাসিন্দারা টের না পেলেও আধুনিক ফায়ার প্রিভেনশন সিস্টেমের মাধ্যমে সরাসরি আগুনের খবর যায় দমকল বিভাগে। দ্রুত দমকলের বেশ কয়েকটি ইঞ্জিন মিনিট পনেরোর মধ্যেই সেখানে হাজির হয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। দমকলের আওয়াজে বাসিন্দারা টের পান কিছু একটা ঘটেছে। অবশ্য ততক্ষণে আগুন দোতলা থেকে ক্রমশ উপর তলাগুলো গ্রাস করতে শুরু করেছে। প্রাণভয়ে বহু মানুষ তখন জানালা দিয়ে বাঁচার আর্ত চিৎকার করে চলেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি কয়েকজনকে জানালা দিয়ে লাফ দিতেও দেখেছেন তাঁরা। এক ব্যক্তিকে এরমধ্যেই সাদা বেডকভার নাড়িয়ে সাহায্য চাইতে দেখা যায়। রাতেই দমকলের ৫০টি ইঞ্জিন ও ২০০ জন দমকলকর্মী আগুন নেভানোর কাজে নেমে পড়েন। বার করে আনা হয় প্রায় ৩০ জনকে। আগুন ততক্ষণে গোটা বাড়িটার দখল নিয়েছে। প্রতিটি জানালা দিয়ে আগুনের লেলিহান শিখা বেরিয়ে আসছে। যে ৩০ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তাঁদের বেশ কয়েকজন গুরুতরভাবে দগ্ধ। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মৃতের সংখ্যা পরিস্কার না হলেও দমকলকর্মীদের ধারণা ১২০টি ফ্ল্যাটে বহু মানুষের বাস। সেখানে ৩০ জনকে বার করতে পারা তেমন কিছু নয়। বাকিদের ভিতরে কি অবস্থা তা যতক্ষণ না আগুন নিয়ন্ত্রণে আসছে ততক্ষণ বোঝা সম্ভব নয়। তবে মৃত্যুর আশঙ্কা যথেষ্ট। তারমধ্যে আর এক চিন্তা প্রশাসনকে আরও বিপাকে ফেলেছে। পুরনো এই অ্যাপার্টমেন্ট আগুনে এতটাই ভস্মীভূত যে তা যে কোনও মুহুর্তে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে প্রশাসন।