শিবলিঙ্গের উৎপত্তি কিভাবে, পুরাণের কথা
প্রাচীনকাল থেকেই শিবলিঙ্গে শিবোপাসনা প্রচলিত আছে ভারতে, ভারতের বাইরেও। শিবলিঙ্গে শিবপূজা সর্বশ্রেষ্ঠ বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিভিন্ন পুরাণ ও তন্ত্রে।
অনেক কথাই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যদি শিবলিঙ্গের উৎপত্তি সম্পর্কে পুরাণের বিবরণ কিছু জানা না থাকে। শিবপুরাণ, স্কন্দপুরাণ, বামনপুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, পদ্মপুরাণ, কালিকাপুরাণ, নারদপঞ্চরাত্র, মহানির্বাণতন্ত্র এবং অন্যান্য পুরাণ ও উপপুরাণে শিবলিঙ্গের উৎপত্তি সম্বন্ধে অনেক বিবরণ দেওয়া আছে। বিভিন্ন বর্ণনার মধ্যে ঐক্য স্থাপন করে যা পেয়েছি তা অতি সংক্ষেপে এখানে লেখা হল।
মহাপ্রলয়ের মহাসমুদ্রে ব্রহ্মা ও বিষ্ণু উভয়েই ‘আমি সৃষ্টি স্থিতি ও সংহারকর্তা এবং দেবতাদের মধ্য প্রধান’, এই তর্কবিতর্ক থেকে লিপ্ত হন ঘোরতর যুদ্ধে। এ সময় ভগবান শশাঙ্কশেখর ভীষণাকার অনল স্তম্ভরূপে উভয় যোদ্ধা তথা ব্রহ্মা ও বিষ্ণুর মধ্যস্থলে প্রলয় পয়োধিজলে আবির্ভূত হন।
এই অতীন্দ্রিয় অগ্নিময় লিঙ্গ কোথা থেকে এল, তা নির্ণয় করার জন্য যুদ্ধ বন্ধ করে ব্রহ্মা ও বিষ্ণু সচেষ্ট হলেন। ব্রহ্মা হংসরূপ ধারণ করে ওই লিঙ্গস্তম্ভের উপর ক্রমশ উঠতে থাকেন। বহুকাল চেষ্টা করেও ওই স্তম্ভের মাথার শেষ কোথায় তা দেখতে পেলেন না।
আর ভগবান বিষ্ণু বরাহমূর্তি ধারণ করে পাতাল ভেদ করে আরও অধোদেশে গিয়েও খুঁজে পেলেন না স্তম্ভের মূল কোথায়। বিষ্ণু স্বয়ং জ্যোতির্ময় লিঙ্গের সন্ধান করেছিলেন বলে এই কল্পের নাম হয় ‘শ্বেতবরাহকল্প’।
পুরাণের মতে, শ্বেতবরাহকল্পে ভূ-সৃষ্টির পর অতীত হয়েছে ১৯৫৫৮৮৯০৭৮ বছর। সুতরাং জ্যোতির্ময় লিঙ্গের এটাই আবির্ভাব সময় ধরা যেতে পারে। আর যে রাত্রিতে প্রথম প্রকাশ হয় ওই জ্যোতির্লিঙ্গের, ভগবান সদাশিব সেই রাত্রিকেই নিজে আখ্যা দিয়েছেন ‘শিবরাত্রি’।
লিঙ্গরূপী মহাদেবই ব্রহ্ম, শিবলিঙ্গ ব্রহ্মেরই প্রতীক। গৌরীপট্টে শিবলিঙ্গ স্থাপন করে শিবপূজার বিধি। শিব ও শক্তির মিলিত শক্তি নিহিত আছে বাণলিঙ্গে। শক্তির প্রতীক যোনি যথা ত্রিকোণচিহ্ন।
প্রাচীনকাল থেকেই শিবলিঙ্গে শিবোপাসনা প্রচলিত আছে ভারতে, ভারতের বাইরেও। শিবলিঙ্গে শিবপূজা সর্বশ্রেষ্ঠ বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিভিন্ন পুরাণ ও তন্ত্রে।
কুমারিকা খণ্ড, কেদার খণ্ড, কাশী খণ্ড প্রভৃতি পুরাণোক্ত এক একটি খণ্ডে (Region) শিবলিঙ্গের বিস্তৃত বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, ভারতের সমস্ত অঞ্চলে শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত আছে আবহমান কাল থেকে।