ভোরের আলো তখনও ফোটেনি। এমন রাতভোরে আক্ষরিক অর্থেই বঙ্গবাসীর গণ-জাগরণ বছরে একটাই দিনে হয়। দিনটা মহালয়া। রেডিও বিমুখ বাঙালিকে ভোর ৪টে আচমকাই করে তোলে রেডিওপ্রেমী। বহুদিনের অনভ্যাস কাটিয়ে চলে রেডিও টিউনিং। কোথায় যেন হয় মহালয়াটা? অবশেষে সন্ধান মেলে। ঘরঘর শব্দে বেজে ওঠে… বাজল তোমার আলোর বেণু! চেনা সুরে সত্যিই মেতে ওঠে ভুবন।
মহালয়া নয়, যেন মায়ের পদধ্বনি শুনতে পায় বাঙালি। মনে লাগে পুজোর হাওয়া। মহালয়া মানেই পিতৃপক্ষের অবসান। দেবীপক্ষের শুরু। পিতৃপক্ষের অবসানের দিনে পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ প্রাচীন প্রথা। ইহলোক ত্যাগ করা পিতৃপুরুষকে তিল, জল দান শাস্ত্রীয় রীতির অংশ। এবার আবার বেলা ১০টা ৪৭ মিনিটের পর পিতৃপক্ষের অবসান হয়েছে। ফলে অন্যান্যবার যেমন সকাল থেকেই বিভিন্ন গঙ্গার ঘাটে মানুষের ঢল নামে এবার তেমন হয়নি। বেলা ১১টা থেকে বিভিন্ন গঙ্গার ঘাট সহ অন্যান্য নদীর পারে ছিল চোখে পড়ার মত ভিড়। কোমর পর্যন্ত জলে নেমে চলেছে তর্পণ। তিল, জল হাতে মন্ত্রোচ্চারণ। বেলায় তর্পণ শুরু হওয়ায় দুপুরেও বিভিন্ন ঘাটে তর্পণের ভিড় নজর কেড়েছে। অনেকে আবার বাড়িতেই সেরেছেন তর্পণ প্রক্রিয়া।
তর্পণ দেরিতে শুরু হলে কী হবে! এদিনের পুণ্য তিথিকে সামনে রেখে অনেকে সকাল থেকেই বিভিন্ন গঙ্গার ঘাটে হাজির হন গঙ্গাস্নানে। এদিকে অন্যান্যবারের মতই আহিরীটোলা, বাবুঘাট সহ বিভিন্ন গঙ্গার ঘাটে এদিন হাজার হাজার মানুষ তর্পণ করতে আসেন। উপচে পড়ে ভিড়। জেলায় জেলায় বিভিন্ন নদীর পাড়েও ছিল তর্পণ করতে আসা মানুষের ঢল। সব মিলিয়ে পুজোর ঢাকে এদিন থেকেই পড়ে গেল কাঠি। বাঙালি মেতে উঠল তাদের সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসবে।