Mythology

মহিষাসুরকে কেন পুজো করা হয়, পুরাণের এক অজানা কাহিনি

রাত্রিকালে স্বপ্নে ভদ্রকালী মূর্তি দেখলেন মহিষাসুর। শুরু করলেন তাঁর আরাধনা। আরাধনায় প্রীত ও প্রসন্ন দেবী এলেন।

এক সময় দেবতাদের স্বর্গলোক থেকে বিতাড়িত করলেন মহিষাসুর। লাভ করলেন স্বর্গরাজ্য। বিপন্ন অনন্যোপায় দেবতারা শরণাপন্ন হলেন ব্রহ্মার। ব্রহ্মা দেখলেন তাঁর কিছু করার নেই। স্বয়ং শিব ও দেবতাদের সঙ্গে নিয়ে গেলেন ভগবান বিষ্ণুর কাছে। আনুপূর্বিক সমস্ত দুর্দশার কথা জানালেন। বিগলিতহৃদয় বিষ্ণুকে অনুরোধ করলেন তাঁদের রক্ষা করতে।

কারণ, মহিষাসুর পুরুষের অবোধ্য হয়েছেন ব্রহ্মারই বরে। সমস্ত কথা শুনে বিষ্ণু বললেন, পুরুষের অবধ্য এই অসুরকে বধ করতে হলে নিজ নিজ স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হয়ে, স্ব স্ব তেজের কাছে প্রার্থনা করতে হবে যে, এই সমবেত তেজ থেকে যেন কোনও নারীমূর্তি আবির্ভূতা হন। সেই নারীই পারবেন অসুরকে বিনাশ করতে।


এ কথা শুনে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, ইন্দ্র এবং অন্যান্য দেবতাদের দেহ থেকে নির্গত হল তেজ। সেই সমবেত তেজোরাশি থেকে আবির্ভূতা হলেন এক পরমা সুন্দরী নারী। তাঁকে বিবিধ অস্ত্র দান করলেন দেবতারা।

এদিকে নারীরূপী দেবীর রূপে আকর্ষিত হলেন মহিষাসুর। বিবাহের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হল। এবার ক্রুদ্ধ অসুরের সঙ্গে ঘোরতর যুদ্ধ হল দেবীর। নিহত হলেন মহিষাসুর।


মহিষাসুর জন্মগ্রহণ করেন তিনবার। ত্রিবিধ রূপ ধারণ করে তাঁকে তিনবারই বিনাশ করেন এই দেবী। মহিষাসুরকে বধ করার জন্য প্রথমে অষ্টাদশভুজা উগ্রচণ্ডা রূপে, দ্বিতীয়বার ভদ্রকালী এবং তৃতীয়বার বধ করলেন দশভুজা দেবী দুর্গা রূপে। দুর্গাই হলেন পরমা প্রকৃতি। শিবপত্নী দেবী বিশ্বের আদি কারণ।

রাত্রিকালে স্বপ্নে ভদ্রকালী মূর্তি দেখলেন মহিষাসুর। শুরু করলেন তাঁর আরাধনা। আরাধনায় প্রীত ও প্রসন্ন দেবী এলেন। নিবেদিত হৃদয়মন মহিষাসুর জানালেন, ‘আপনার হাতে মৃত্যুর জন্য কোনও দুঃখ বা ক্ষোভ নেই এতটুকুও। কিন্তু আপনার সঙ্গে আমিও যাতে সকলের পূজিত হই তারই ব্যবস্থা করুন দেবী। এছাড়া আর কিছুই চাই না আমি।’

দেবী ভদ্রকালী তখন আশীর্বাদ করে বললেন, ‘উগ্রচণ্ডা, ভদ্রকালী আর দুর্গা, এই তিন মূর্তিতে আমার পদলগ্ন হয়ে তুমি সব সময়েই পূজ্য হবে দেবতা, মানুষ ও রাক্ষসদের।’

সত্যযুগে রাজা সুরথ ও সমাধি নামক বৈশ্য তিন বছর বসন্তকালে গৌণ চান্দ্র চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী তিথিতে প্রথম পূজার্চনা করেছিলেন দুর্গামূর্তি প্রস্তুত করে। ত্রেতাযুগে লঙ্কেশ্বর রাবণ দেবী দুর্গার পুজো করতেন চৈত্র মাসে বসন্তকালে। সেই জন্যে এই পুজো বাসন্তীপুজো নামে সুখ্যাত। রাবণ বধের জন্যেও দেবীর পুজো করেছিলেন শ্রীরামচন্দ্র অকালে বোধন করে। এসব কথা দেবীভাগবত, মার্কণ্ডেয় চণ্ডী ও কালিকা পুরাণের। ‘কুরুক্ষেত্রে ভদ্রকালী ব্রজে কাত্যায়নী পরা’, দেবী ভদ্রকালী এইভাবে উল্লিখিত হয়েছেন আদ্যাস্তোত্রে। দ্বাপরের কথা। মহাভারতীয় যুগ। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের আগে শ্রীকৃষ্ণ পঞ্চপাণ্ডবদের সঙ্গে নিয়ে কুরুক্ষেত্রে (হরিয়ানা রাজ্য) প্রথমে স্থানেশ্বর মহাদেব হয়ে পরে আসেন দেবী ভদ্রকালীর কাছে। পুজো ও যজ্ঞ করেন। দেবীর কাছে আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন কৌরবদের সঙ্গে যুদ্ধে বিজয়লাভের। এসব লেখা আছে ভদ্রকালী মন্দিরপ্রাঙ্গণের একটি সাইনবোর্ডে।

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button