National

বৈচিত্র্যের বিচিত্র ডোরে দেশ জুড়ে পালিত মকরসংক্রান্তি

সারা দেশে পালিত হল মকরসংক্রান্তি। দেশ জুড়ে ফসল ঘরে তোলার এই উৎসব পালিত হয় নানাভাবে। শীতের ফসল অর্থাৎ রবি শস্য তোলাকে কেন্দ্র করে এই উৎসব। সাধারণত ভারতে ক্যালেন্ডার তৈরি হয় চান্দ্র ক্যালেন্ডার মেনে। কিন্তু মকরসংক্রান্তি পালন হয় সূর্য ক্যালেন্ডার মেনে। বৈচিত্র্যের মধ্যে মিলনের এই দেশে মকরসংক্রান্তি পালনেরও নানা উপায়। নানা পরম্পরা। এই দিনেই সূর্য মকর রাশিতে প্রবেশ করে। তাই দেশের অনেক জায়গায় একে উত্তরায়ণ হিসাবেও পালন করা হয়। এই দিন থেকেই সূর্য উত্তর গোলার্ধে যাত্রা শুরু করে। দেশের বিভিন্ন কোণায় এই উত্তরায়ণ মানেই ঘুড়ি। আকাশ ছেয়ে যায় রঙিন ঘুড়িতে। গুজরাটেই এদিন ঘুড়ি ওড়ানোর চল সবচেয়ে বেশি। গঙ্গাসাগরে পুণ্যস্নান তো আছেই, সেইসঙ্গে এদিন এলাহাবাদেও গঙ্গায় স্নান কারতে হাজির হন বহু পুণ্যার্থী। ভোর থেকেই এলাহাবাদের গঙ্গায় চলে পুণ্যস্নান। শুরু হয় মাঘ মেলা। পুণ্যস্নানের ভিড় জমে বারাণসীতেও। এদিকে হায়দরাবাদে মকরসংক্রান্তি পালিত হয় একদম অন্যভাবে। রাস্তায় বার হয় সুন্দর করে সাজানো একটি মোষ। সামনে সামনে হাঁটেন এক ব্যক্তি। যাঁর হাতে থাকে একটি সানাই জাতীয় বাদ্যযন্ত্র। সেই বাদ্য বাজাতে বাজাতেই রাস্তায় হাঁটতে থাকেন তাঁরা। অসমে আবার এই দিনটি পালিত হয় ভোগালি বিহু বা মাঘ বিহু নামে। উত্তরপ্রদেশ, বিহারে দিনটি খিচড়ি নামে পালিত হয়ে থাকে। হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ ও পঞ্জাবে আবার মকরসংক্রান্তি মানে মাঘি উৎসব। তেমনই আবার দক্ষিণ ভারতে মকরসংক্রান্তি পালিত হয় পোঙ্গল নামে। কেরালায় আবার এই দিনেই শেষ হয় শবরীমালায় পুণ্যার্থী আগমন। মকরসংক্রান্তিতে গুড় আর তিল একটি অবশ্য খাবার হিসাবে নেন অনেকে। কথিত আছে ছেলে শনির ওপর প্রবল রাগ এদিনই ঝেড়ে ফেলে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন পিতা সূর্যদেব। সেই আনন্দে বিলি হয় প্রচুর মিষ্টি। এই সময়ে তিল ও গুড় খেয়ে তাই মুখমিষ্টি করতে হয়। সেই থেকেই শান্তি ও ভালবাসার বার্তা নিয়ে তিল-গুড়ের শাসন চলে আসছে মকরসংক্রান্তিতে। অনেক জায়গায় মানুষের বিশ্বাস এই দিনেই মহিষাসুরকে বধ করতে পৃথিবীতে পা রাখেন মহিষাসুরমর্দিনী মা দুর্গা। পশ্চিমবঙ্গে দিনটি পালিত হয় পৌষ সংক্রান্তি হিসাবে। সারা দেশে যখন তিল-গুড় আর দারুণ দারুণ খাবারে দিনটিকে পালন করা হয়, তখন রাজ্যে দিনটি পালিত হয় পিঠে-পুলির অমোঘ সুবাসে। বহু পরিবারেই এই দিনটায় নানা রকমের পিঠে খাওয়ার চল আছে। বিশেষত বাংলার গ্রামেগঞ্জে পৌষ সংক্রান্তি মানেই ঘরে ঘরে পিঠেপুলি! এদিন কলকাতাতেও বিভিন্ন গঙ্গার ঘাটে পুণ্য গঙ্গাস্নানে ভিড় জমান মানুষজন। পৌষ সংক্রান্তির দিন পুরুলিয়া জুড়ে পালিত হয় টুসু উৎসব। পৌষ মাস জুড়ে লৌকিক দেবী টুসুর পুজো হয় এখানকার ঘরে ঘরে। তারপর পৌষ শেষে হয় বিসর্জন। এদিন কাঁসাই ও সুবর্ণরেখার পাড়ে ভিড় জমে টুসু বিসর্জনের। টুসু গান এই উৎসবের অন্যতম অঙ্গ। রংবেরঙের কাগজ দিয়ে সাজানো টুসু বিসর্জন দেখতে ভিড় জমান বহু মানুষ। শুধু পুরুলিয়া নয়, টুসু উৎসব পালিত হয় বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরেও।

 



Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button