স্বাস্থ্যের পর এবার বেসরকারি স্কুলগুলির লাগামহীন ফি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার টাউন হলে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁদের ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে বছরভর টাকা নেওয়ার বহর নিয়ে তুলোধোনা করেন তিনি। হোমওয়ার্ক যে তিনি করে এসেছিলেন তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি। এদিন এক এক করে বেসরকারি নামীদামী স্কুলের প্রতিনিধিদের দাঁড় করিয়ে লাগামছাড়া ফি, ডোনেশন নিয়ে প্রশ্ন করেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন এত টাকা তাও জানতে চান তিনি। সদুত্তর না দিতে পেরে যখনই কেউ কিছুটা ধামাচাপা দেওয়া উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তখনই মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের চেপে ধরেছেন। সাফ জানিয়েছেন তাঁর কাছে যথেষ্ট তথ্য আছে। তার ভিত্তিতেই প্রশ্ন তুলছেন তিনি। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর তোপ থেকে রেহাই পাননি লামার্টস, মডার্ন হাই স্কুল, সেন্ট জেভিয়ার্স, হেরিটেজ সহ বেশ কিছু স্কুলের প্রতিনিধি। শ্রী শিক্ষায়তনের বিরুদ্ধে ক্লাসে রাজনৈতিক নেতাদের বক্তৃতা শোনানোর অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়ে রীতিমত উষ্মা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়ে দেন তাঁর বক্তৃতা শোনানো হলেও তিনি খুশি হবেন না। সাফ জানিয়ে দেন, এটা বন্ধ করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন মানবিক সুরেই জানান, পয়সা দিয়ে মেধার বিচার হয়না। অনেক সাধারণ পরিবার রয়েছে যারা ছেলেমেয়েকে অনেক কষ্ট করে পড়ায়। তাদের পক্ষে বছরে শুরু থেকে সেশন ফি, মাসিক ফি, ডোনেশন, সামার ক্যাম্পের টাকা, জন্মদিনের টাকা, ষ্টেশনারী কেনার টাকা, ইউনিফর্ম কেনার টাকা, জুতো কেনার টাকা, স্কুলের বই-খাতা কেনার টাকা, এভাবে টাকা দেওয়া সম্ভব হয়না। এটাও স্কুলগুলিকে বুঝতে হবে বলে পরামর্শ দেন তিনি। বিভিন্ন স্কুলের লাগামছাড়া খরচে লাগাম দিতে একটি সেলফ রেগুলেটরি কমিটিও তৈরি করে দেন তিনি। কমিটিতে লা মার্টস, মডার্ন হাই, হেরিটেজ, লরেটো, শ্রীশিক্ষায়তন সহ দশটি স্কুলের প্রতিনিধি, দার্জিলিংয়ের ১ জন প্রতিনিধি, রাজ্যের শিক্ষা সচিব, পুলিশের ডিজি, কলকাতা পুলিশের নগরপাল থাকবেন। থাকবেন প্রতিটি জেলার ডিপিও। এই কমিটি বছরে কমপক্ষে ৪টি করে বৈঠক করবে। প্রতি ত্রৈমাসিকে ১ বার। এদিন বাংলা ভাষাকে স্কুল শিক্ষায় বাধ্যতামূলক করার বিষয়েও বিশেষ জোর দেন মুখ্যমন্ত্রী। জানান, পশ্চিমবঙ্গে সব স্কুলে বাংলা পড়ানো বাধ্যতামূলক করতে হবে। যদি কেউ প্রথম ও দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে বাংলা ছাড়া অন্য ভাষা পড়তে চায় তাতে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু সেক্ষেত্রে তৃতীয় ভাষা হিসাবে বাংলা পড়তেই হবে। দশম শ্রেণি পর্যন্তই বাংলা পড়তে হবে। বোর্ডের পরীক্ষায় যদি বাংলা না দেয় দেবে না। এদিন যা বললেন তা নিয়ে ভাবার আহ্বান জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান ১ বছর পর তিনি ফের স্কুলগুলির সঙ্গে বসবেন। দেখবেন কোথায় কী উন্নতি হল।