তাঁর বেফাঁস মন্তব্যের জন্য বিখ্যাত বীরভূমের ডাকসাইটে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। অনেক সময়ে তাঁর মন্তব্য দলকে অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। সেই অনুব্রত মণ্ডলেরই এদিন খোলাখুলি পাশে দাঁড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বরং অনুব্রতকে প্ররোচনা দিয়ে তাঁকে দিয়ে বেফাঁস কথা বলানো হয় বলে পাল্টা দাবি করেন মমতা। এজন্য বিজেপিকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, বিজেপির বীরভূমে একটাই কাজ, অনুব্রতকে উস্কানি দেওয়া। এতদিন বেফাঁস মন্তব্য করে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বা স্বয়ং নেত্রীর কাছে বকাঝকাই শুনতে হয়েছে বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলকে। এদিন মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর এভাবে তাঁর পক্ষে সওয়াল অনুব্রতকে বাড়তি ‘অক্সিজেন’ দিল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। রাজ্য রাজনীতিতে মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে বিজেপি। উত্তরপ্রদেশ জয়ের পর বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বলেই দিয়েছিলেন তাঁদের এবার লক্ষ্য বাংলা। সেই লক্ষ্যে ঘুঁটিও সাজাচ্ছে গেরুয়া শিবির। দলে পেয়েছে একসময়ে তৃণমূলের অন্যতম মুখ মুকুল রায়কে। এই পরিস্থিতিতে সামনের পঞ্চায়েত নির্বাচনে পরিস্কার হতে চলেছে রাজ্যের একেবারে তৃণমূল স্তরে কোন দলের ভিত কতটা পোক্ত। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে এটা কার্যত অ্যাসিড টেস্ট। এই পরিস্থিতিতে দলকে একত্র করতে মুখ্যমন্ত্রী মরিয়া।
বীরভূমের আমোদপুরে ৮ দিনের জঙ্গলমহল উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তৃণমূল সুপ্রিমোর ঝাঁঝালো আক্রমণের লক্ষ্যই ছিল বিজেপি। কংগ্রেস বা বামেরা এদিন মমতা বন্দ্যোপাধায়ের নিশানায় সেভাবে জায়গাই পায়নি। কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্প ও রাজনৈতিক রণনীতির কড়া ভাষায় সমালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী তিন তালাক বিলের বিরুদ্ধেও মুখ খোলেন। যখন সংসদে তিন তালাক বিল পেশ হচ্ছে তখন মুখ্যমন্ত্রী বীরভূমে ভাষণ দিচ্ছিলেন। তাঁর দাবি, পুরো বিলটাই ‘ডিফেক্টিভ’। এতে মুসলিম মহিলাদের সমস্যা আরও বাড়বে বলে দাবি করেন তিনি। তিন তালাক বিলকে ‘ডিফেক্টিভ বিল’ বলেই থেমে থাকেননি মুখ্যমন্ত্রী। নারী শিক্ষা বা নারীদের সম্মান ও নিরাপত্তা একমাত্র পশ্চিমবঙ্গ সরকারই দিতে পারে বলে দাবি করেন তিনি।
এদিন জঙ্গলমহল উৎসবের সূচনার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন অজয় নদের ওপর একটি সেতু নির্মাণ করবে রাজ্য সরকার। যা স্থানীয় মানুষজনের যাতায়াতের সময় কমাবে। এদিন বীরভূমে উন্নয়নের একটি দীর্ঘ তালিকা তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে পাখির চোখ করেই যে তিনি এদিন সভায় বক্তব্য রাখেন তা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের কাছে পরিস্কার। এদিন মঞ্চ থেকেই কারও প্ররোচনায় পা না দিয়ে রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী।
(মুখ্যমন্ত্রীর ছবি – সৌজন্যে – ফেসবুক – মমতা ব্যানার্জী অফিসিয়াল)