বিধানসভায় এদিন জবাবি ভাষণে বিরোধীদের তুলোধোনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য পেশ দেখে মনেই হয়েছিল তিনি বিরোধীদের জবাব সহজ ভাষায় দেবেন না। তারমধ্যে আবার বিরোধীদের ওয়াকআউট আরও ক্ষুব্ধ করে তাঁকে। এদিন বলতে উঠে বাম ও কংগ্রেসই ছিল তাঁর নিশানায়। বিরোধীদের ‘সেলফিশ জায়েন্ট’ থেকে শুরু করে কংগ্রেস সিপিএমকে ‘মেড ফর ইচ আদার’ বলে কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী। সব কথায় বিরোধীরা বিরোধিতা করতে হবে বলে বিরোধিতা করছে বলে দাবি করে মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের গঠনমূলক সমালোচনার পাঠ দেন। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক সৌজন্য বজায় রাখার জন্যও বিরোধীদের পরামর্শ দেন তিনি। গভর্নরের ভাষণ নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনার জবাব দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এদিন রাজ্যপালের ভাষণকে সম্মান জানানোর আহ্বান জানান।
তিনি বিধানসভায় বললে বিরোধীরা ভয় পান বলেও এদিন দাবি করেন ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বিধানসভায় বক্তব্য রাখার সময় ক’বার বিরোধীরা অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত ছিলেন তারও হিসাব নিতে বলেন মমতা। বিরোধীদের কটাক্ষ করা এখানেই শেষ হয়নি। কংগ্রেস নেতাদের দিকে নিশানা করে তাঁদের চুনোপুঁটি নেতা বলে ব্যাখ্যা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন তিনি কংগ্রেস বিধায়কদের বলেন, দিল্লিতে কংগ্রেসের তৃণমূল ছাড়া চলে না। গত বৃহস্পতিবার উলুবেড়িয়া ও নোয়াপাড়ায় জয়ের জন্য খোদ সনিয়া গান্ধী তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বুঝিয়ে দেন কংগ্রেসের উপরতলার সঙ্গে তাঁর ওঠাবসা। তারা সম্মান জানায় তাঁকে। তাই এখানে বিরোধিতার সময় কংগ্রেসের স্থানীয় নেতৃত্ব যেন সেকথা মাথায় রাখেন। সতর্ক থাকেন। অন্যদিকে বামেদেরও একের পর এক নিশানা করছেন মুখ্যমন্ত্রী।
উলুবেড়িয়া লোকসভা ও নোয়াপাড়া বিধানসভা, দুটি আসনেই দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে বিজেপি। তার পিছনে সিপিএম, কংগ্রেস। এদিন উল্লেখযোগ্যভাবে এজন্য সিপিএম, কংগ্রেসের দিকে আঙুল তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি এদিন নাম না করে খোলাখুলি জানান, তৃণমূল ১ নম্বরে। কিন্তু ২ ও ৩ নম্বরে সিপিএম ও কংগ্রেস থাকুক সেটাই তাঁরা চেয়েছিলেন। কিন্তু তা হয়নি। বিজেপি সিপিএম, কংগ্রেসের লোকেদের একাংশকে কাজে লাগিয়ে দুনম্বরে উঠে এসেছে বলেও দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী আরও কড়া সুরে জানান, গত বৃহস্পতিবার যাঁরা গো হারান হেরেছেন তাঁরা একদিন পরেই আবার বিধানসভা অধিবেশনে এসে হট্টগোল করছেন। এভাবে হারের পরও একদিনের জন্য চুপ থাকতে পারছেন না তাঁরা।
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সম্পূর্ণ বক্তব্যে সংবাদমাধ্যমও রেহাই পায়নি। পাশাপাশি বিরোধীদের টিভির ওপর বেঁচে আছেন বলে কটাক্ষ করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি বিরোধীদের যত বক্তব্য টিভিতে মুখ দেখালে। টিভিতে মুখ দেখাতে না পারলেই সব চুপচাপ। সবমিলিয়ে এদিন বিরোধীদের আক্রমণকেই প্রধান অস্ত্র হিসাবে বেছে নেনে তিনি। অ্যাটাক ইজ দ্যা বেস্ট ডিফেন্সের তত্ত্ব মেনে এদিন মুখ্যমন্ত্রীর আক্রমণাত্মক মেজাজের আঁচ ওয়াকআউট করলেও যে বিরোধীদের কাছে পৌঁছেছে তা অনেকটাই পরিস্কার। পরে সুজন চক্রবর্তী বক্তব্য রাখতে গিয়ে পাল্টা মুখ্যমন্ত্রীর দিকেই অনেক বিষয়ে আঙুল তোলেন।