উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদে এদিন একটি জনসভায় বক্তব্য রাখছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বক্তব্য শেষে ধন্যবাদ জানাচ্ছিলেন সকলকে। ঠিক সেই সময়ে আচমকাই পায়ের দিকে নজর যেতে চমকে মাইক হাতে কিছুটা পিছিয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী। কালো পোশাকে এক মহিলা তখন মঞ্চে উঠে তাঁর পায়ের কাছে পৌঁছে গেছেন। সুরক্ষা কর্মীদের এবার টনক নড়ে। ছুটে গিয়ে ধরে ফেলেন মহিলাকে। সুরক্ষা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও ওই মহিলাকে মঞ্চেই বসাতে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। জানতে চান কী হয়েছে? যদিও সভামঞ্চ থেকে এটাও পরিস্কার করে দেন যে এটা কোনও পদ্ধতি হতে পারে না। যদি কিছু বলার থাকে তবে চিঠি লিখেই জানাতে পারতেন ওই মহিলা। এজন্য সভামঞ্চে উঠে পড়া কোনও উপায় নয়। এভাবে কেউ যদি আচমকা মঞ্চে উঠে পড়েন তাহলে তার কাজ হবে না বলেও পরিস্কার করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি সুরক্ষা কর্মীদের সুরক্ষায় ফাঁক থাকা নিয়েও কড়া ধমক দেন।
কিন্তু কে ওই মহিলা? কেনই বা তিনি এভাবে মঞ্চে উঠে পড়লেন? জানা গেছে, তাঁরা ২ বোন আমিরা ও রাবিনা খাতুন। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শেষে মঞ্চে ওঠার জন্য নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে ঢুকে পড়েন দুজনে। তারপর একেবারে মুখ্যমন্ত্রীর পায়ের কাছে পৌঁছে যান রাবিনা খাতুন। তাঁদের বাবা ২০১৫ সালে খুন হন। এরপর পরিবারের একজনকে চাকরি, গীতাঞ্জলি আবাস যোজনায় বাড়ি, বিনামূল্যে চিকিৎসার সুবিধা, ২ টাকা কেজি দরে চাল সবই বন্দোবস্ত করে দেয় রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি এতকিছু তো সরকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। তারপরও যদি কোনও বক্তব্য থাকে তাহলে সঠিক রাস্তায় তা জানাতে হবে। যদিও রাবিনা জানান, তিনি চান তাঁর বাবার মৃত্যুর সুবিচার। যা এখনও হয়নি। এই আর্জি নিয়ে তিনি নাকি নবান্ন পর্যন্তও গিয়েছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয়নি। তাই এদিন এভাবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছন তিনি।
যদিও এভাবে এক মহিলার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে যাওয়া নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কোনও আততায়ী হতে পারত, কোনও সন্ত্রাসবাদী হতে পারত, কোনও রাজনৈতিক শত্রু হতে পারত। আরও কত সম্ভাবনা ছিল। চাইলে এদিনই মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষতি করতে পারতেন যে কেউ। তাহলে তাঁর জেডপ্লাস সুরক্ষার মানে কী? অনেকে রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর কথাও মনে করিয়ে দেন। তাঁদের বক্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর সুরক্ষা বলয়ে এই গাফিলতি মানে তো বড় অঘটনের চরম সম্ভাবনা। এদিনের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী দিনে মুখ্যমন্ত্রীর সুরক্ষায় আরও জোর দেওয়া হবে বলেই আশা রাখছেন সকলে।