শহর বা তার বাইরেও যত ব্রিজ রয়েছে তার অধিকাংশেরই তলায় একটু ঘুরলেই নজর কাড়ে সন্তান সন্ততি নিয়ে নিশ্চিন্ত সংসার। ব্রিজই মাথার ওপর ছাদ। সেই ছাদের নিচে ঘর বেঁধে বহু পরিবার বছরের পর বছর কাটিয়ে দেন। সেখানেই রান্না। সেখানেই ঘুম, সংসার করা, ছোটদের বড় করা। চলে টিভি। তৈরি হয় ক্লাব। তৈরি হয় মহল্লা। এসব আর করা যাবে না। বৃহস্পতিবার নবান্নে বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ব্রিজ তৈরি হলেই তার নিচে সংসার পেতে বসে পড়েন কিছু মানুষ। এঁরা অনেকেই এলাকারও হননা। এসব আর চলবে না। পুলিশকে এই দখলদারি সাফ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি জানিয়ে দিয়েছেন, মাথার ওপর ছাদ না থাকলে রাজ্য সরকারকে জানাতে। সরকার প্রয়োজনে তাঁদের ব্যবস্থা করে দেবে।
মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে পড়ার পর গত বুধবার দার্জিলিং থেকে ফিরে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে ঘুরে দেখার পর মেট্রো রেলের কাজের জন্য হওয়া কম্পনের দিকে কিছুটা হলেও আঙুল তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিলেন রিপোর্ট আসার আগে পর্যন্ত মেট্রোর কাজ বন্ধই থাকবে মাঝেরহাট ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায়। এদিন বিকেলে নবান্নে এ নিয়ে বৈঠক করেন তিনি। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গড়ে দেন। সেই কমিটি পুরো বিষয় খতিয়ে দেখবে। প্রয়োজনে বিভিন্ন দফতরকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। কাগজপত্র খতিয়ে দেখবে। কথা বলবে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন আশ্বাসের সুরেই বলেন, যারা দোষী হবে তারা কঠোর শাস্তি পাবে। পূর্ত দফতর, পোর্ট ট্রাস্ট, রেল কেউই জিজ্ঞাসাবাদ থেকে রেহাই পাবে না।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন সাফ জানিয়ে দেন, ১০ বা ২০ চাকার গাড়ি আর তিনি ব্রিজের ওপর দিয়ে যাতায়াতের অনুমতি দেবেননা। এই ভারী গাড়ি ব্রিজগুলির ক্ষতি করছে। কেবল ৬ বা ৮ চাকার গাড়ি যাতায়াত করতে পারে।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানিয়েছেন ২০টি ব্রিজের স্বাস্থ্য পরীক্ষার দরকার আছে। এরমধ্যে শিয়ালদহ ব্রিজের সমস্যা হলেন দোকানদারেরা। ব্রিজ সারাই করতে গেলে দোকানদারদের বাধার মুখে পড়তে হয় বলে এদিন দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিকে এদিন সাংবাদিক বৈঠকে বেশ কিছু প্রশ্নে মেজাজ হারান তিনি। তাঁর প্রশ্ন এ রাজ্যে ব্রিজ ভেঙে পড়লে কার দোষ নিয়ে হৈচৈ হয়। আর যখন বেনারস বা মহারাষ্ট্রে ব্রিজ ভেঙে পড়ে তখন তা দুর্ঘটনা হয়! এই বৈষম্য কেন তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী।