বিদ্যাসাগর কলেজের ছাত্রাবাসে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তি দুষ্কৃতি হামলায় ভেঙে টুকরো টুকরো হয়েছিল ২৮ দিন আগে। মঙ্গলবার হুবহু সেই মূর্তি নতুন করে স্থাপিত হল। মুখ্যমন্ত্রী নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সেই মূর্তিকে সঠিক জায়গায় পুনরায় বসিয়ে দেন। মঙ্গলবার নতুন মূর্তির আবরণ উন্মোচনের মূল অনুষ্ঠানটি হয়েছে হেয়ার স্কুলে। কলেজ স্ট্রিট চত্বরের এই প্রাচীন স্কুলে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তিটির আবরণ উন্মোচন করেন। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী থেকে শিক্ষা জগতের মানুষজন, ছিলেন সংস্কৃতি জগতের বিশিষ্টজনেরা, ছিলেন ছাত্রছাত্রী থেকে শিক্ষক সকলেই। সেখানে বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী।
মঙ্গলবার হেয়ার স্কুলের অনুষ্ঠানটি একেবারেই শিক্ষা জগতের অনুষ্ঠান হলেও যেহেতু অনুষ্ঠানটির বীজ নিহিত রয়েছে একটি রাজনৈতিক তাণ্ডবে তাই হয়ত মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে এদিন জায়গা পেয়েছে রাজনীতিও। বর্তমানে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ভোটের আগে বিজেপি সভাপতি হিসাবে কলকাতায় একটি রোড শো করেন। সেই রোড শো বিদ্যাসাগর কলেজ পার করার পরেই কলেজে তাণ্ডব শুরু হয়। দুষ্কৃতিদের হাতে টুকরো টুকরো হয় বিদ্যাসাগরের মূর্তি। সেই কাণ্ড কারা করেছে তার তদন্ত চলছে। তবে সেদিন বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা মেনে নিতে পারেনি আপামর বাঙালি। সেদিন রাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দেন মূর্তি ফের বানিয়ে দেওয়া হবে। সেইমত ঘটনার ২৮ দিন পর ফের মূর্তি বসল যথাস্থানে।
মূর্তি উন্মোচনের পর হেয়ার স্কুল থেকে মূর্তি নিয়ে পদযাত্রা শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী। পা মেলান লেখক, কবি, সাহিত্যিক, চলচ্চিত্র, গান, আবৃত্তি সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রের বিদ্বজ্জনেরা। ছিলেন মন্ত্রীরাও। পদযাত্রা এসে পৌঁছয় বিদ্যাসাগর কলেজের সামনে। এখানে মূর্তি গাড়ি থেকে নামিয়ে প্রতিষ্ঠিত করা ঠিক সেখানে যেখানে মূর্তি ভাঙার আগে প্রতিষ্ঠিত ছিল। মূর্তিতে মালা পরিয়ে সম্মান জানান মুখ্যমন্ত্রী। পরে তিনি বিদ্যাসাগর কলেজের গেটে বিদ্যাসাগরের একটি পূর্ণাবয়ব মূর্তিরও আবরণ উন্মোচন করেন।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বিদ্যাসাগর কলেজের উন্নয়নে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে ১ কোটি টাকা অর্থ সাহায্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। এছাড়া বিদ্যাসাগরের স্মৃতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ঘাটাল কলেজের উন্নয়নেও ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেন তিনি। বিদ্যাসাগরের জন্ম ভিটে বীরসিংহ গ্রামের উন্নয়ন ও হেরিটেজ ঘোষণা ও বীরসিংহ ভগবতী বিদ্যালয়কে হেরিটেজ ঘোষণার কথা জানান তিনি। বিদ্যাসাগরের জন্মের ২০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ সরকার করবে বলেও জানান তিনি। বিদ্যাসাগরের জন্মের ২০০ বছর পূর্তি উৎসব পালনের জন্য একটি পৃথক কমিটিও গড়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।