Kolkata

আমাদের মুড়ি ফিরিয়ে দাও, ২১-এর মঞ্চ থেকে কেন্দ্রকে তোপ মমতার

২১ জুলাইয়ের শহিদ মঞ্চ থেকে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি বার্তা দেন সেদিকে তাকিয়ে ছিলেন সকলে। এদিন একাধারে সিপিএম ও বিজেপির দিকে তোপ দাগেন তিনি।

২ বছর বন্ধ থাকার পর ফের ২১শে জুলাইয়ের সমাবেশ। ফলে উৎসাহে খামতি ছিলনা। ২০১৯ সালের পর এবারের ২১শে জুলাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি বার্তা দেন সেদিকেও নজর ছিল সকলের। সমাবেশে ভিড় ছিল নজরকাড়া।

সেই জনপ্লাবনের সামনে দাঁড়িয়ে এদিন কিন্তু সিপিএম ও বিজেপি ২ দলকেই কড়া শব্দে বিদ্ধ করেছেন তৃণমূলনেত্রী। এদিন সভায় আসা কারও কাছে মুড়ি আছে কিনা জানতে চান মমতা। একজন মুড়ি মঞ্চে পাঠাতে তৃণমূলনেত্রী নিজে হাতে সেটি একটি সুসজ্জিত ট্রে-তে ঢালেন। তারপর প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন মুড়িতেও জিএসটি নিয়ে।


বাংলার আমজনতার খাবার হিসাবে পরিচিত মুড়ির ওপর জিএসটি নিয়ে প্রশ্ন তুলে স্লোগান দেন আমাদের মুড়ি ফিরিয়ে দাও। নাহলে বিজেপি বিদায় নাও।

এমনকি তৃণমূল কর্মী সমর্থক নেতাদের বলেন ইডি, সিবিআই, ইনকাম ট্যাক্সকে দিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টাকে না ভয় পেয়ে ওই সংস্থার আধিকারিকরা বাড়িতে এলে তাঁদেরও মুড়ি খাওয়াতে। দই, লস্যিতে জিএসটি নিয়ে তোপ দেগে তাঁর কটাক্ষ নকুলদানা বা বাতাসায় কত জিএসটি?


এদিন ভিড়ের মধ্যে থেকেই একটি প্রতীকী গ্যাসের সিলিন্ডারও মঞ্চে চেয়ে পাঠান মমতা। তারপর তা অভিনেতা সাংসদ দেবের হাতে ধরিয়ে তিনি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি সহ জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সরব হন।

এদিন কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই উঠে এসেছে টেট দুর্নীতি কাণ্ডের প্রসঙ্গ। মমতা এদিন জানান ১৭ হাজার শিক্ষকের চাকরি খালি পড়ে আছে কিন্তু মামলা চলায় সেই চাকরি দেওয়া যাচ্ছেনা।

তিনি সিপিএমের দিকে আঙুল তুলে দাবি করেন, সিপিএম ক্ষমতায় থাকাকালীন ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা দিয়ে শিক্ষকের চাকরি হয়েছে। বামেদের একটি মুখপত্র সংবাদপত্রে কর্মরত সাংবাদিকদের স্ত্রীদেরও সকলে শিক্ষকতার চাকরি হয়েছিল বলে দাবি করেন মমতা।

এমনকি সিপিএম নেতা বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য পুরসভার মেয়র থাকাকালীন সেখানে বার্থ সার্টিফিকেট দুর্নীতি হয়েছে বলেও দাবি করেন মমতা। এমনকি হুঁশিয়ারি ছুঁড়ে জানান সেই ফাইল তিনি চাইলে বার করে দিতে পারেন।

অগ্নিপথ নিয়ে হইচই চলাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সোচ্চার হতে তেমন একটা দেখা যায়নি। তবে এদিন তিনি সরাসরি অগ্নিপথ নিয়ে কেন্দ্রকে বিঁধেছেন।

সেনাবাহিনীতে অগ্নিপথে ৪ বছর পর ছাঁটাই নিয়ে বলতে গিয়ে তৃণমূলনেত্রীর দাবি অগ্নিপথে দেশের সেনাকে বঞ্চনা করা হচ্ছে। এভাবে নিজেদের দলের ক্যাডার বানাচ্ছে বিজেপি বলেও দাবি করেন তিনি।

কেন্দ্রের বিভিন্ন দফতরে চাকরি দেওয়া নিয়ে দুর্নীতি হচ্ছে বলেও ইঙ্গিত দেন মমতা। তবে তাঁর পাল্টা দাবি, বাংলায় কিন্তু চাকরি নিয়ে কোনও দুর্নীতি হবেনা। কোনও দল বা জাতি বা ধর্ম দেখে এখানে চাকরি হবেনা, হবে কেবল প্রার্থীর যোগ্যতায়।

মমতার দাবি, মহারাষ্ট্রের মত বাংলাতেও ভাঙন ধরাতে চাইছে বিজেপি। কিন্তু তা বাংলায় সম্ভব নয় বলে বার্তা দেন মমতা। এদিন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগার সময় তৃণমূলনেত্রীকে বেশ কিছুটা সময় হিন্দিতে বলতে শোনা যায়। জাতীয় স্তরে তাঁর বার্তা পৌঁছে দিতেই এই হিন্দিতে বলা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। এদিন ১০০ দিনের কাজের টাকা সহ অন্যান্য বকেয়া ফেরত না পেলে দিল্লিতে গিয়ে আন্দোলনেরও হুঁশিয়ারি দেন মমতা।

কর্মসংস্থান নিয়ে বলতে গিয়ে মমতার দাবি, ডেউচা পাঁচামিতে ১ লক্ষের ওপর চাকরি হবে। এছাড়া পশ্চিমাঞ্চল জুড়ে লক্ষাধিক চাকরির রাস্তা খুলছে। রাজ্যে ৭২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি। জানান ৫০০টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরি হচ্ছে রাজ্যে।

এদিন তৃণমূলনেত্রী বক্তব্য রাখার আগে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বক্তব্য রাখেন। সেখানে তিনি সাফ জানান আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে কোনও নেতার ধামাধরা হলেই যে টিকিট পাওয়া যাবে তা নয়। যোগ্যতায় কাজের মধ্যে দিয়ে তৃণমূল প্রার্থী করবে।

এক্ষেত্রে কোনও ধরাধরি যে কাজে লাগবেনা তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন অভিষেক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এদিন দলীয় কোন্দল থামানোর বার্তাই দিয়েছেন দলের কর্মী সমর্থকদের।

Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button