রং বাহারে শহর মুড়ে ১ মাস আগেই বাংলায় আগমনীর সুর, কার্যত শুরু পুজো
রংয়ের বাহারে চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়া রূপ নিয়েই ইউনেস্কোকে ধন্যবাদজ্ঞাপন শোভাযাত্রায় মোহময় হল শহর। ভাদ্রেই শুরু হয়ে গেল পুজোর আনন্দ।
ঠিক ছিল দুপুর ২টো থেকে শুরু হবে শোভাযাত্রা। কিন্তু শোভাযাত্রা শুরু হয় তার কিছুটা আগেই। রাস্তা বৃষ্টিতে ভিজে থাকলেও মুখ্যমন্ত্রী যখন জোড়াসাঁকো থেকে হাঁটা শুরু করলেন তখন বৃষ্টি থেমে গেছে।
ভেজা রাস্তায় রঙিন ছাতা মাথায় দিয়েই হাঁটতে শুরু করেন সকলে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পা মেলান টলি পাড়ার চেনা মুখ থেকে মন্ত্রী, আমলারাও। পিছনে ছিলেন বিভিন্ন পুজো কমিটির সদস্যরা। তাঁরা শোভাযাত্রায় হাঁটার পাশাপাশি নাচে, গানে মেতে ওঠেন। তাঁদের সাজও ছিল চোখে পড়ার মতন।
বাজছিল পুজোর গান। রাস্তার ধারে ধারে কোথাও বাজছিল শাঁখ, কোথাও উলুধ্বনি। তালপাতার পাখা নিজে হাতে তুলে কিছুক্ষণ হাওয়া করেন মুখ্যমন্ত্রী। রিক্সাও বাদ যায়নি। যাতে বসেছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের মত মনিষীদের সাজে পড়ুয়ারা।
ঢাকের বাদ্যি বেজে চলছিল। রণপা পরে হেঁটে চলেছিলেন নানা সাজের মানুষ। সহজ করে বললে শহরের রাস্তায় এদিন শুধু রং আর রং। রংয়ে রংয়ে সত্যিই এদিন রঙিন হয়ে ওঠে চারধার।
উৎসবের মেজাজ ছিল তুঙ্গে। ছিল ছৌনাচ, বাউল গান, লাল পেড়ে সাদা শাড়িতে গয়নায় মোড়া মহিলাদের মিলিত শঙ্খধ্বনি। ধুনোর ধোঁয়ায় এক অন্য আবহ তৈরি হয়েছিল।
মুখ্যমন্ত্রীর শোভাযাত্রা শুরুর পরই কিন্তু রোদ উঠে যায়। ঝলমলে আকাশে রংয়ের ছোঁয়ায় এই ভরা ভাদ্রেই যেন শুরু হয়ে গেল দুর্গাপুজো। বাহারি পোশাক থেকে বনেদি শাড়ি গয়নায় মুড়ে মিছিলে প্রতিটি মানুষও হয়ে উঠেছিলেন রঙিন।
সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ হয়ে শোভাযাত্রা ধর্মতলা ছুঁয়ে ১ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যায় রেড রোডে। শোভাযাত্রায় দেখা মেলে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলের ক্লাব সমর্থকদেরও। আবার শিব পার্বতী সেজেও হাঁটলেন বহুরূপীরা।
এদিন বহু পুজো উদ্যোক্তা ক্লাব হাজির হয়েছিল এখানে। কলকাতা, হাওড়া এবং বিধাননগরের পুজো কমিটিগুলি এখানে অংশ নেয়। যাদের অনেকেই শোভাযাত্রার সামনের কাছেও পৌঁছে উঠতে পারেনি। এছাড়া এদিন সারা রাজ্য জুড়েই বিভিন্ন জায়গায় পুজোর শোভাযাত্রা বার হয়।
সকাল থেকেই প্রবল গরমের মধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছিল প্রস্তুতি। ভিড় জমছিল। ধামসা মাদল বাজছিল। বাজছিল ঢাক। চলছিল নাচ। এক সময় চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, কৃষ্ণা চক্রবর্তীকেও ধুনুচি হাতে রাস্তায় নেমে পড়তে দেখা যায়। জোড়াসাঁকোর কাছে আনা হয় মাটির দুর্গামূর্তি। একচালার মূর্তি পুরোটাই মাটির। মাথায় সোনালি মুকুট।
বেলা যত গড়িয়েছে উৎসাহের পারদ ক্রমশ চড়েছে। দুর্গাপুজো এখনও ১ মাস বাকি। তার আগে কার্যত শহরে পুজোর ঢাকে এদিন কাঠি পড়ে গেল।
বাংলার দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কো-র হেরিটেজ স্বীকৃতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এই শোভাযাত্রা শুরু হয় দুপুর ২টো নাগাদ। চারিদিকে তখন শুধু রংয়ের ছড়াছড়ি।
এদিকে এদিন সকাল থেকে রেড রোডের মঞ্চেও চলতে থাকে নাচ, গান, আনন্দ। এদিন সকালে রোদ থাকলেও শোভাযাত্রা শুরুর আগে প্রবল বৃষ্টি নামে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউতে। অবশ্য তাতে আনন্দে ভাটা পড়েনি।
রঙিন ছাতায় মাথা ঢেকেই চলে দুর্গাপুজোর আনন্দ। মন্ত্রী শশী পাঁজার বাড়ি গিরিশ পার্কের মুখে। সেখানেই জমায়েত। শশী পাঁজাও আগেভাগে নেমে আসেন আনন্দে যোগ দিতে।