১০ বছরের অপেক্ষা শেষ। বৃহস্পতিবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে সিঙ্গুরের জমি ফেরত পেলেন কৃষকরা। লাঙল দেওয়া মাটিতে ছড়িয়ে পড়ল সর্ষের বীজ। মুখ্যমন্ত্রী নিজে সেই বীজ ছড়িয়ে দিলেন সিঙ্গুরের জমিতে। সেই জমি যা এক সময়ে টাটার ন্যানো কারখানা গড়ার জন্য অধিগ্রহণ করেছিল তৎকালীন বাম সরকার। অনিচ্ছুক চাষিদের কাছ থেকেও জমি নেওয়া হয়েছিল। যা জন্ম দিয়েছিল সিঙ্গুর আন্দোলনের। বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে শুরু হওয়া সেই আন্দোলন একসময়ে দেশের অন্যতম আলোচ্য আন্দোলন হয়ে ওঠে। সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক চাষিদের জমি ফেরত দেওয়ার দাবিতে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ওপর মমতার ১৬ দিনের অবস্থান, রাতের অন্ধকারে তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া, ধর্মতলায় মমতার অনশন, ন্যানো কারখানা গুটিয়ে টাটাদের সানন্দে বিদায়। একের পর এক পর্ব সিঙ্গুর আন্দোলনের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করে তুলেছে।
জমি ফেরত দেওয়াকে কেন্দ্র করে মমতার এই আন্দোলন তাঁর রাজনৈতিক জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। তাই ক্ষমতায় আসার পর তাঁর প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিঙ্গুরের জমি ফেরতকে অন্যতম প্রধান আলোচ্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপর দীর্ঘ আইনি জটিলতা কাটিয়ে অবশেষে সিঙ্গুরের জমি ফেরতের নির্দেশ দেয় আদালত। সেই জমি এদিন ফের ফেরত পেলেন কৃষকরা। আর এই প্রাপ্তির রাস্তা সুগম করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াই অনস্বীকার্য। সেদিক থেকে এদিন সিঙ্গুর আন্দোলনের বৃত্ত সম্পূর্ণ করলেন তিনিও। আর তাই বোধহয় তাঁর হাতে দিয়ে এদিন জমি ফেরতের প্রতীকী শুরুটা হল একটু অন্যভাবে। ১০৩ একর জমি ২৯৮টি প্লটে এদিন আল দিয়ে আলাদা করা হয়েছিল। যা কৃষকদের হাতে এদিন তুলে দিচ্ছে রাজ্য সরকার। তারই কিছু জমিতে নিজের নিজের প্লটে বসেছিলেন জমির মালিকরা। এসব কৃষকদের কাছে এদিন নিজে যান মমতা। গাড়ি থেকে নেমে মঞ্চে না উঠে সোজা চলে যান জমিতে। ছড়াতে থাকেন সর্ষের বীজ। কৃষকদের কাছে নিজে হাজির হয়ে তাঁদের হাতে তুলে দেন বেগুনের চারা ও সর্ষে বীজ। পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সিঙ্গুর আন্দোলন শুধু ভারত নয়, সারা বিশ্বের কাছে একটা মডেল হয়ে থাকবে। সিঙ্গুর আন্দোলনে যাঁরা শহিদ হয়েছিলেন তাঁদের নামে এই জমিতে একটি স্মৃতি সৌধ বানান হবে বলেও জানান তিনি। জমি পাবেন বর্গাদার ও খেতমজুররাও। মুখ্যমন্ত্রী জানান, মোট ৯৯৭ একর জমির মধ্যে চাষযোগ্য অবস্থায় আনা হয়েছে ৯৩২ একর। বাকি ৬৫ একর জমিতে কংক্রিটের কাঠামো, কৃত্রিম পুকুর আছে। সেগুলিকে ভেঙে জমিকে দ্রুত চাষযোগ্য করে তোলা হবে। রাজ্য সরকারের টার্গেট আগামী ১০ নভেম্বরের মধ্যেই সব জমি চাষযোগ্য করে করে ফেরত দিতে হবে চাষিদের। কিন্তু সেই কাজ ৮ নভেম্বরের মধ্যেই সম্পূর্ণ করার জন্য বলেন মুখ্যমন্ত্রী।