বাংলা সংস্কৃতি জগতে নক্ষত্রপতন, চলে গেলেন মনোজ মিত্র
চলে গেলেন পর্দার বাঞ্ছারাম। বাংলা নাট্যজগতের সর্বকালের অন্যতম উজ্জ্বল তারকা মনোজ মিত্রের জীবনাবসান বাংলার সংস্কৃতি জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি করে দিল।
বাংলা সংস্কৃতি চর্চার জগতের অন্যতম উজ্জ্বল তারকা অভিনেতা, নাট্যকার মনোজ মিত্র আর নেই। মঙ্গলবার সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে তাঁর জীবনাবসান হয়। বেশ কিছুদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন।
সোডিয়াম, পটাসিয়াম স্তর উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেও গিয়েছিল মাঝে। যদিও তখন তাঁকে সুস্থ করা গেলেও শেষ রক্ষা হল না। ৮৬ বছর বয়সে চলে গেলেন বাংলা নাট্যচর্চার এক নিরলস সৈনিক।
যিনি বাংলা নাটককে যা দিয়ে গেলেন তা বহুকাল মানুষের মনে থেকে যাবে। তাঁর জীবনাবসানে শোকপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভেঙে পড়েন তাঁর অগণিত গুণমুগ্ধ।
পরাধীন ভারতের খুলনায় তাঁর জন্ম। দেশভাগের পর ১৯৫০ সালে চলে আসেন ভারতে। এই বাংলার মাটিতেই তাঁর যাবতীয় কর্মকাণ্ড শুরু। স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়বার সময় থেকেই তিনি নাট্যচর্চার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তৈরি করেন সুন্দরম নামে একটি নাট্যদল।
তারপর একের পর এক নাটক মঞ্চস্থ হতে থাকে। তাঁর মৌলিক ভাবনা, নাট্য পরিবেশনে অভিনবত্ব তাঁকে খুব দ্রুত মানুষের নজরে এনে ফেলে। শুধু নাট্যকার হিসাবেই নয়, অভিনেতা হিসাবেও মনোজ মিত্র ছিলেন অসাধারণ।
নাট্যচর্চার মধ্যেই কাটছিল জীবন। প্রথম তাঁর সেলুলয়েডে আত্মপ্রকাশ তাঁরই লেখা নাটক সাজানো বাগান অবলম্বনে তৈরি সিনেমা বাঞ্ছারামের বাগান-এ।
তপন সিনহার মত সেরা পরিচালক, মনোজ মিত্রের লেখা, মূল চরিত্রে তাঁর অসামান্য অভিনয় তাঁর প্রথম সিনেমাতেই মনোজ মিত্রকে মানুষের মনে জায়গা করে দেয়। এরপর নাটক আর সিনেমা একসঙ্গে চলতে থাকে।
বহু সিনেমায় মনোজ মিত্রকে নানা চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেছে। ভিলেনের চরিত্রেও তিনি ছিলেন সমান সাবলীল। জীবনে সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার থেকে এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে স্বর্ণপদক, তাঁর সম্মান প্রাপ্তির ঝুলি নেহাত ছোট নয়।
বাংলা সংস্কৃতি জগতের এক চিরস্মরণীয় নাম হয়ে থেকে যাবেন মনোজ মিত্র। তিনি নেই। কিন্তু তাঁর কাজ চিরদিন নতুন প্রজন্মকে নতুন কিছু শেখাবে।