National

‘প্যাডম্যান’-কে তো চিনলেন, ‘প্যাড ওম্যান’-এর কথা জানেন কি?

রাত পোহালেই বক্স অফিসে হাজির হবেন ‘প্যাডম্যান’ অক্ষয় কুমার। সুরক্ষিত হোক দেশের ঋতুমতী নারীদের মাসিকচক্র। বিশেষত গ্রামীণ অঞ্চলের মেয়েদের ঋতুস্রাবের সময় তাঁরা ব্যবহার করুন স্যানিটারি ন্যাপকিন। এই সংকল্প নিয়ে লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন অরুণাচলম মুরুগানান্থম নামে এক ব্যক্তি। শেষে দেশীয় প্রযুক্তিতে তিনি বানিয়েও ফেলেন স্যানিটারি প্যাড। বহু প্রতিকূলতার মধ্যেও তাঁর সেই লড়াইয়ের গল্প এখন লোকের মুখে মুখে। সৌজন্যে অক্ষয় কুমার ও তাঁর বহু প্রতীক্ষিত ছবি ‘প্যাডম্যান’।

তবে মুরুগানান্থম একা নন। মেয়েদের ঋতুস্রাবকে সুরক্ষিত করার যজ্ঞে আছেন আরেক ভারতীয়। তিনি নিজেও একজন নারী। আমেরিকায় মোটা মাইনের চাকরি অনায়াসে পেয়ে যেতেন তিনি। কিন্তু লোভনীয় চাকরির হাতছানিকে উপেক্ষা করে ২ বছর আগে মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন মায়া বিশ্বকর্মা। মধ্যপ্রদেশের মেয়ে মায়া। ছোটবেলায় গ্রামের বাকি মেয়েদের মতো তিনিও মাসিকের সময় ব্যবহার করতেন কাপড়। প্যাড নামক জিনিসের তিনি তখন নামও শোনেননি। কিন্তু উচ্চশিক্ষার সূত্রে সহপাঠিনীদের থেকেই তিনি জানতে পারেন স্যানিটারি প্যাড ব্যবহারের উপকার। গবেষণার জন্য ক্যালিফোর্নিয়ায় গিয়ে ২০১৬ সালে তাঁর সাথে আলাপ হয় বাস্তবের প্যাডম্যানের। তাঁর কর্মকাণ্ডে অনুপ্রাণিত হন কেমিক্যাল ও বায়োলজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্রী মায়া। বিদেশে পড়াশোনার পাঠ অসমাপ্ত রেখে দেশে ফিরে আসেন তিনি। দেশে ফিরে দেখেন, আজও অস্বাস্থ্যকর আদ্যিকালের পুরনো নিয়মের নাগপাশে জর্জরিত মধ্যপ্রদেশের নরসিংহপুর জেলার গ্রামের মেয়েদের মাসিকচক্র। মুরুগানান্থমের মত তাঁরও মাথায় জেদ চেপে বসে। জন্মভূমির মেয়েদের শিক্ষিত করে তুলতে হবে। তাদের মন থেকে কুসংস্কারের শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে। মেয়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত করতে প্যাডের ব্যবহারবিধি সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। রাজ্যের প্রতিটি মেয়ের হাতে সস্তায় তুলে দিতে হবে ‘স্যানিটারি প্যাড’।


সেই ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে উঠে পড়ে লাগেন মায়া বিশ্বকর্মা। নিজের সঞ্চিত অর্থ আর ক্যালিফোর্নিয়ার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্য নিয়ে তিনি যোগাড় করে ফেলেন ৫ লক্ষ টাকা। সেই টাকা দিয়ে তিনি কেনেন প্যাড তৈরির আধুনিক মেশিনসহ অন্যান্য সরঞ্জাম। সেই সরঞ্জাম দিয়ে এখন রোজ ২০০০টির মত প্যাড তৈরি করেন মায়া ও তাঁর মহিলা ব্রিগেড। সেই প্যাড তিনি ও তাঁর মহিলা সেনারা গ্রামে গ্রামে গিয়ে তুলে দেন মেয়েদের হাতে। যদিও বিনামূল্যে নয়। ১৫-২০ টাকার বিনিময়ে ১টি প্যাকেট। ১ প্যাকেটে মিলবে ৭টি প্যাড। বাজার চলতি নামীদামী সংস্থার প্যাডের তুলনায় দাম অনেকটাই কম। ন্যূনতম দামে স্যানিটারি প্যাড বিতরণের তাঁর সেই সৎ প্রচেষ্টা মন ছুঁয়ে গেছে প্রত্যন্ত গ্রামীণ নারীকুলকে। তাই মধ্যপ্রদেশের মহিলা মহলে মায়া বিশ্বকর্মার এখন একটাই পরিচয়, তিনি তাঁদের ‘প্যাড জিজি’। আর বাকিদের কাছে মায়া বিশ্বকর্মা এখন ‘প্যাড ওম্যান’। ‘প্যাডম্যান’-এর পর চলচ্চিত্রের পর্দায় তবে কি এবার আসতে চলেছেন ‘প্যাড ওম্যান’? সেটাই দেখার অপেক্ষায় মুখিয়ে দেশবাসী।


Show Full Article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button