১৯৬০ বা ৭০-এর দশকে কলকাতার মায়াময় সন্ধে রাতের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল মিস শেফালির ক্যাবারে। এমন কেউ ছিলেন না যিনি মিস শেফালির নাম জানতেন না। কলকাতা ও ক্যাবারে, এই ২ শব্দকে এক করলে দাঁড়াত মিস শেফালি। বিভিন্ন হোটেলে তখন অন্যতম আকর্ষণ ছিল ক্যাবারে নৃত্য। ক্যাবারে একটি নৃত্যশৈলী তো বটেই, সেইসঙ্গে মানুষের মনোরঞ্জনের মত যথেষ্ট মায়াবী শরীরী বিভঙ্গ ছিল এতে। কলকাতার ক্যাবারে রানি বলে পরিচিত ছিলেন মিস শেফালি। সেই মিস শেফালি চলে গেলেন বৃহস্পতিবার। কিডনির সমস্যায় দীর্ঘদিন ভুগছিলেন তিনি।
৭৭ বছর বয়সে মৃত্যু হল তাঁর। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় সোদপুরের বাড়িতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। জীবনের শেষে এসে কিন্তু আর্থিক সমস্যায় ভুগতে হয়েছে কলকাতার একসময়ের রাত্রজীবনের এই তারকাকে। যাঁর নাচ সাধারণ মানুষের পাশাপাশি মুগ্ধ করেছিল উত্তমকুমার, অমিতাভ বচ্চনের মত তারকাদের। সত্যজিৎ রায় মিস শেফালিকে তাঁর ২টি সিনেমায় সুযোগ দেন। সীমাবদ্ধ ও প্রতিদ্বন্দ্বী এই ২টি সিনেমায় মিস শেফালিকে কাস্ট করেন সত্যজিৎ রায়।
পড়ুন : হেলেন ছিলেন একজন সত্যিকারের স্টাইল ডিভা : শত্রুঘ্ন সিনহা
মিস শেফালি অবশ্য তাঁর আসল নাম নয়। বাংলাদেশ থেকে পরিবারের সঙ্গে কাঁটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে যে ছোট্ট মেয়েটি ভারতে শরণার্থী হয়ে প্রবেশ করেছিল তার নাম ছিল আরতি দাস। পরিবারের প্রবল আর্থিক অনটনের জন্য রোজগার করতে মাত্র ১২ বছর বয়সেই তাঁকে ক্যাবারে নৃত্য পরিবেশন করতে হয়। ফিরপো নামে কলকাতার এক নামী হোটেলে ক্যাবারে দিয়েই তাঁর জীবন শুরু হয়। তারপর অবশ্য তাঁকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। মাঝে যথেষ্ট প্রাচুর্যের মুখ দেখলেও এই বৃদ্ধ বয়সে তাঁকে ফের পড়তে হয় অনটনের জালে। একটি আত্মজীবনী লেখেন মিস শেফালি। নাম ‘সান্ধ্য রাতের শেফালি’। সেই বর্ণময় জীবনের সমাপ্তি ঘটল বৃহস্পতিবার।