পুরস্কার নিতে এসে সকলের সামনে বক্ষদেশ উন্মুক্ত করলেন গায়িকা
গায়িকা দাঁড়িয়ে পোজও দিচ্ছিলেন। আর ঠিক সেই সময় সকলকে চমকে দিয়ে পরনের কালো জ্যাকেটটি সামনে থেকে খুলে অনেকটা নামিয়ে দেন।
শহরের নাম লাস ভেগাস। এখানেই বসেছিল লাতিন গ্র্যামি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। লাতিন গ্র্যামি বলে কথা! তাই জাঁকজমকের কোনও অভাব ছিলনা। বড় মাপের পুরস্কার মঞ্চ। ফলে সাংবাদিক, চিত্র সাংবাদিকরাও উপস্থিত ছিলেন। সেখানেই রেড কার্পেট দিয়ে একে একে প্রবেশ করছিলেন অতিথিরা। দাঁড়িয়ে ছবি শিকারিদের আবদার মেটাচ্ছিলেন।
সেই রেড কার্পেট ধরেই এগিয়ে আসেন চিলির গায়িকা মোঁ লাফারতে। এই মঞ্চে তিনি একজন পুরস্কার বিজেতাও। তাঁর ছবিও তুলতে শুরু করেন চিত্রগ্রাহকরা। গায়িকা দাঁড়িয়ে পোজও দিচ্ছিলেন। আর ঠিক সেই সময় সকলকে চমকে দিয়ে পরনের কালো জ্যাকেটটি সামনে থেকে খুলে অনেকটা নামিয়ে দেন লাফারতে। উন্মুক্ত হয়ে যায় তাঁর স্তন যুগল।
লাফারতের এই কাণ্ডে প্রাথমিক চমক কাটিয়ে তখন ছবি তোলা শুরু হয়ে যায়। লাফারতে উন্মুক্ত রাখেন তাঁর বক্ষদেশ। তাঁর বুকের ওপর কালো মার্কার গোছের কালি দিয়ে লেখা ছিল চিলির ভাষায় কিছু কথা। যার মানে দাঁড়ায়, চিলিতে ওরা অত্যাচার করে, ধর্ষণ করে, হত্যা করে।
নীরব প্রতিবাদ। চিলির সরকার বিরোধী প্রতিবাদে তিনিও সামিল। প্রতিবাদীদের পাশে রয়েছেন তিনি। সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেন তিনি এভাবে। চিলির বর্তমান অবস্থার কথা তুলে ধরেন। বিশ্বকে নীরবে জানিয়ে দেন চিলির কথা।
লাফারতে তাঁর বক্ষদেশ উন্মুক্ত করার মত সাহসিকতা দেখান দেশের জন্য। এটা সকলের কাছে তারিফ কুড়িয়েছে। এত বড় মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদের ভাষাকে এমন অন্য আঙ্গিকে তুলে ধরলে তা যে আগুনের মত গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে তা বিলক্ষণ জানতেন ৩৬ বছরের এই গায়িকা।
তাই অন্য কোনওভাবে প্রতিবাদ করা নয়। একজন নারী হয়ে বক্ষদেশ সকলের সামনে উন্মুক্ত করাকে দ্রুত তাঁর বার্তা পৌঁছে দেওয়ার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করেন তিনি। আর তাতে কাজ হয় হয়তো তাঁর ভাবনার চেয়েও দ্রুত গতিতে।
গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে সেই ভিডিও। সেই ছবি। গলায় সবুজ রুমাল জড়িয়ে উন্মুক্ত বক্ষে বুকে প্রতিবাদের ভাষা নিয়ে দাঁড়িয়ে এক নারী। এক নীরব প্রতিবাদ।
মাস খানেক আগে চিলিতে পাতাল রেলের ভাড়া বাড়ায় সরকার। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আছড়ে পড়ে। দীর্ঘদিনের ক্ষোভে ঘৃতাহুতি পড়ে। আর সেই প্রতিবাদকে হাতিয়ার করে হুহু করে ছড়াতে থাকে সরকার বিরোধী প্রতিবাদ। সরকারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
চিলির ফুটবল দলও আগামী সপ্তাহে বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতায় পেরুর বিরুদ্ধে নামবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। গোটা চিলি জুড়ে প্রবল প্রতিবাদ চলছে। ইতিমধ্যেই ২০ জন প্রতিবাদীর প্রাণ গেছে।
সরকার কড়া হাতে প্রতিবাদ দমনের চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু প্রতিবাদ আরও ছড়িয়ে পড়ছে। এবার চিলির সেই ভয়ংকর পরিস্থিতির কথা লাফারতের বক্ষস্পর্শে পৌঁছে গেল গোটা বিশ্বের কাছে। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা