বাংলার রাঁধুনির হাতেই জন্ম নেয় মোগলাই পরোটা, সে এক টানটান কাহিনি
মোগলাই পরোটা নামটা শুনলে অনেকেই মনে করেন তা মোগলদের আনা রান্না। কিন্তু মোগলাই পরোটা মোটেও তা নয়। বরং এক বাঙালির হাতেই তৈরি হয় মোগলাই পরোটা।
মোগলাই পরোটা বাঙালির অন্যতম পছন্দের জলখাবার। আলুর তরকারি, স্যালাড দিয়ে মোগলাই পরোটায় ডুব দিতে পারলে বাঙালির মন ভাল হয়ে যায়। বঙ্গবাসীর এই পছন্দের খাবারটির ইতিহাস জানতে গেলে ফিরে যেতে হয় অনেকটা পিছনে।
সময়টা মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকাল। সেই সময় একঘেয়ে পরোটা আর মাংস খেতে খেতে অরুচি ধরে যায় সম্রাট জাহাঙ্গীরের। তিনি তাঁর খাস খানসামা আদিল হাফিজ উসমানকে ডেকে পাঠান। জানান তাঁর অরুচির কথা।
সম্রাট জাহাঙ্গীর এটাও জানান যে মাত্র ১০ দিন সময় আছে আদিলের হাতে। তারমধ্যেই তাঁকে এক নতুন পদ রান্না করে সম্রাটকে খাওয়াতে হবে। যার স্বাদ জাহাঙ্গীরের মন ভাল করে দেবে।
সম্রাটের নির্দেশ বলে কথা! আদিলের রাতের ঘুম উড়ে যায়। যে করেই হোক তাঁকে নতুন এক সুস্বাদু রান্নার জন্ম দিতে হবে। যা আবার সম্রাট জাহাঙ্গীরের মনের মত হবে।
১০ দিনের মধ্যে ৮ দিন কেটে যায়। কিন্তু কোনও রান্না মাথায় আসেনি। অবশেষে নবম দিনে জাবির ফালা নামে একটি পদ রেঁধে ফেলেন আদিল। এই জাবির ফালা শব্দের অর্থ হল ডিম রুটি।
পরোটার মধ্যে ডিমের পুরু পুর দিয়ে তৈরি এই নতুন রান্না খেয়ে সম্রাটের দারুণ পছন্দ হয়। আদিল ছিলেন বাংলার বর্ধমানের ছেলে। সম্রাট এতটাই খুশি হন যে তাঁকে ১ হাজার ১টি স্বর্ণমুদ্রা উপহার দেন। সেই সঙ্গে বর্ধমানে একটা বিশাল জমিও উপহার হিসাবে পান খানসামা আদিল হাফিজ উসমান।
তবে এটা মনে করা হয় বাংলার সঙ্গে এই মোগলাই পরোটার যোগ আরও আগেই তৈরি হয়েছিল তুর্ক আফগান যুগে। সে সময় ঢাকায় তুর্কিরা গজলেম নামে একটি পদের প্রচলন করেন। যা তুর্কিদের পছন্দের খাবার ছিল।
খাবারটি তৈরি হত ডিম পরোটার মধ্যে মাংসের কিমা দিয়ে। যা পরবর্তীকালে পৌঁছয় সম্রাট জাহাঙ্গীরের খাবারের পাতে। মোগলাই পরোটাই আরও উন্নত হয়। যাতে ডিম ও পরোটার সঙ্গে পুর হিসাবে যুক্ত হয় মাংসের কিমাও। সেটাও ছিল বাংলারই দান।