বর্ষার সময় টানা বৃষ্টির জেরে মুম্বই অচল হওয়াটা নতুন কিছু নয়। প্রতি বছরই ২-৪ দিন এমন হয়ে থাকে। তবে তা জুলাইয়ের শুরুতেই হবে এটা বোধহয় মুম্বইবাসী কল্পনা করতে পারেননি। কারণ ২৮ জুন বর্ষা ঢুকেছে দেশের বাণিজ্য নগরীতে। সেদিন থেকেই বৃষ্টির শুরু। তবে তা গত ২ দিনে এতটাই প্রবল আকারে হয়েছে যে বাধ্য হয়ে মঙ্গলবার মুম্বইতে ছুটি ঘোষণা করেছে মহারাষ্ট্র সরকার। কোনও আগাম ঘোষণা ছিলনা। কিন্তু মঙ্গলবার মুম্বই শহর এবং তার আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা যেভাবে জলের তলায় চলে গেছে তাতে শুধু গাড়ি বা বাস নয়, মুম্বইয়ের লাইফ লাইন ট্রেন পরিষেবাও মুখ থুবড়ে পড়েছে। আর মুম্বই এমন শহর যেখানে একবার ট্রেন বন্ধ হয়ে গেলে কাজকর্ম লাটে ওঠে। কারণ অধিকাংশ মানুষই আসেন বাইরে থেকে শহরে অফিস বা কাজের জন্য।
মুম্বইতে গত সোমবার এত বৃষ্টি হয়েছে যে তা জুলাইতে মুম্বইতে একদিনের বৃষ্টির রেকর্ড গড়েছে। ১৯৭৪ সালের পর জুলাইতে এত বৃষ্টি মুম্বইতে আগে কখনও হয়নি। ২৪ ঘণ্টায় সোমবার মুম্বইতে বৃষ্টি হয়েছে ৩৭৫ মিলিমিটার। রেললাইন জলের তলায় চলে গেছে অনেক জায়গায়। ফলে সেখান দিয়ে ট্রেন চলাচল সম্ভব নয়। অনেক স্টেশনেও লাইনে জল থৈথৈ করছে।
ট্রেন পরিষেবা যেমন মুখ থুবড়ে পড়েছে তেমনই ব্যাপক প্রভাব পড়েছে বিমানবন্দরেও। মুম্বই বিমানবন্দরে একটি স্পাইসজেটের বিমান মধ্যরাতে ওড়ার সময় রানওয়ে ছাড়িয়ে আরও এগিয়ে যায়। তবে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটেনি এটাই রক্ষে। এছাড়া মুম্বইগামী ৫৫টি বিমানকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়। যারমধ্যে ২৬টি আন্তর্জাতিক বিমান রয়েছে। ১৮টি মুম্বইগামী বিমান বাতিল করা হয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগের শিকার হন যাত্রীরা।
মুম্বই শহরের বিভিন্ন অংশ অনেকটা জলের তলায় চলে গেছে। ভিলেপার্লে, যোগেশ্বরী, আন্ধেরি, দাহিসার-এর মত এলাকাগুলির অবস্থা শোচনীয়। রাস্তায় যান চলাচল প্রায় নেই। কারণ যাওয়ার জন্য রাস্তাই নেই। সেসব জলের অনেক তলায় চলে গেছে। সেখান দিয়ে গাড়ি যেতে গেলে জলের তলায় আটকে যাবে। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ মুম্বইবাসীকে বাড়ি থেকে বার হতে মানা করেছেন। খুব দরকার না হলে বাড়ির মধ্যেই থাকতে সকলকে অনুরোধ করা হয়েছে। মুম্বইতে এদিন ছুটিও ঘোষণা করেছেন তিনি।
কুরলার ক্রান্তি নগর বস্তির ১ হাজারের ওপর বাসিন্দা জলের তলায় শোচনীয় অবস্থায় পড়েছেন। তাঁদের উদ্ধারের জন্য ভারতীয় নৌসেনা কাজে নেমেছে। রবার বোট, লাইফ জ্যাকেট নিয়ে তারা উদ্ধারকাজ শুরু করেছে। এদিকে মুম্বই জুড়ে বৃষ্টি মঙ্গলবারও অব্যাহত। ফলে প্রমাদ গুনতে শুরু করেছেন মুম্বইবাসী। মুম্বইয়ের বন্যা তাঁরা দেখেছেন। ফলে সেই স্মৃতি ফের উসকে দিচ্ছে গত কয়েকদিনের বৃষ্টি এবং মুম্বই শহরের শোচনীয় পরিস্থিতি। — সংবাদ সংস্থার সাহায্য নিয়ে লেখা