বিধবা–বেশে কলাবউ–এর পুজো হয়ে আসছে পাঁচশো বছর ধরে
শাক্ত ও বৈষ্ণবের দেহমন ছিল সদানন্দের প্রভু নিত্যানন্দের। সেই জন্যই তো তিনি দেহে থাকাকালীন তাঁর বাসগৃহ কুঞ্জবাটী-তে শুরু করেন দুর্গাপুজো। এই পুজোর একটি বিষয় একেবারেই বিস্ময়কর।
বীরভূম জেলার রামপুরহাট হয়ে যেতে হয় একচক্রা গ্রাম। এই গ্রামেই শ্রীনিত্যানন্দের (বন্দ্যোপাধ্যায়) জন্ম হয় ১৪৭৩ খ্রিষ্টাব্দের মাঘী শুক্লা ত্রয়োদশী তিথিতে। তিরোধান হয় ১৫৪৫ খ্রিষ্টাব্দে। মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যের দ্বিতীয়দেহ সংসারে বীতরাগ নিত্যানন্দ মাত্র ১২ বছর বয়সে জনৈক সন্ন্যাসীর (বিশ্বরূপের) সঙ্গে গ্রাম ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন তীর্থ পর্যটনে। দীর্ঘ ২০টা বছর পর্যটন করেন উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের অসংখ্য তীর্থ। তারপর স্থিত হলেন মথুরায়। শ্রী গৌরসুন্দরের প্রকাশাবধি সেখানে অপেক্ষা করে নবদ্বীপে আসেন শ্রী নন্দনাচার্যের গৃহে। মিলিত হন গৌরাঙ্গের সঙ্গে। ধীরে ধীরে বাংলা আর শ্রীক্ষেত্র জুড়ে চলল কৃষ্ণনাম প্রচার। এক সময় চৈতন্যের অনুরোধে সংসারী হলেন শ্রী নিত্যানন্দ অবধুত। বিবাহ করলেন কালনার গৌরীদাস পণ্ডিতের ভ্রাতা সূর্যদাস সরখেলের দুই কন্যা বসুধা ও জাহ্নবাকে। বসুধার গর্ভেই জন্ম হল বীরভদ্রের।
গৌরসুন্দরের অনুরোধ রক্ষা করেছিলেন নিত্যানন্দ। দারপরিগ্রহ করে খড়দহে এসে বসবাস করেছিলেন তিনি। যে গৃহে বাস করতেন (শ্যামসুন্দর মন্দিরের বিপরীতে) সেটি আজও ‘কুঞ্জবাটী’ নামে প্রসিদ্ধ। এক সময় এই ‘কুঞ্জবাটী’-তে বসেই “চৈতন্য ভাগবত” রচনা করেছিলেন চৈতন্যগতপ্রাণ শ্রীবৃন্দাবন দাস।
শাক্ত ও বৈষ্ণবের দেহমন ছিল সদানন্দের প্রভু নিত্যানন্দের। সেই জন্যই তো তিনি দেহে থাকাকালীন তাঁর বাসগৃহ কুঞ্জবাটী-তে শুরু করেন দুর্গাপুজো। এই পুজোর একটি বিষয় একেবারেই বিস্ময়কর। কলাবউকে স্নানের জন্য শাড়ির প্রয়োজন। নিত্যানন্দ ভিক্ষায় বেরিয়ে প্রথম ভিক্ষায় পেলেন একটি থান কাপড়। এটি প্রধানত হিন্দু বিধবাদের স্বামী বিয়োগের পর প্রধান পরিধেয় বস্ত্র হিসাবে গণ্য হয়ে থাকে। নির্বিকার নিতাই এসে সেই থানটিই পরিয়ে দিলেন কলাবউকে। রাঙা সিঁদুর লেপে দিলেন কপাল ভরে। নিত্যানন্দ দেবীদুর্গার পুজো করলেন পরমানন্দে। এটাই দাঁড়াল প্রথা হয়ে। শ্যামসুন্দর মন্দির সংলগ্ন কুঞ্জবাটী-তে শত শত বছর (আনুমানিক ৫০০ বছরের অধিক কাল) ধরে এখনও প্রতি বছর পুজো হয়ে আসছে একই প্রথায়। প্রভুর বংশধরদের বাড়িতেও দুর্গাপুজোয় এর কোনও ব্যতিক্রম নেই আজও।
শিয়ালদা-রানাঘাট শাখায় খড়দা ১৯ কিমি। খড়দা স্টেশনে অটো টোটোর ছড়াছড়ি। উঠে পড়ুন একটায় নেমে পড়ুন শ্যামের মন্দিরে।