নবপত্রিকার মাহাত্ম্য ও পুজোর সঠিক পদ্ধতি
পুজোমণ্ডপে নবপত্রিকা প্রবেশের মাধ্যমে দুর্গাপুজোর মূল অনুষ্ঠানটির প্রথাগত সূচনা হয়।
নবপত্রিকা দুর্গাপুজোর একটি বিশিষ্ট অঙ্গ। শব্দটির আক্ষরিক অর্থ নয়টি গাছের পাতা। তবে বাস্তবে নবপত্রিকা নয়টি পাতা নয়, নয়টি গাছ। এগুলি হল: কদলী বা রম্ভা (কলা), কচু, হরিদ্রা (হলুদ), জয়ন্তী, বিল্ব (বেল), দাড়িম্ব (ডালিম), অশোক, মান ও ধান।
একটি কলাগাছের সঙ্গে অপর আটটি সমূল সপত্র উদ্ভিদ একত্র করে একজোড়া বেল সহ শ্বেত অপরাজিতার লতা দিয়ে বেঁধে লালপাড় সাদা শাড়ি জড়িয়ে ঘোমটা দেওয়া বধূর আকার দেওয়া হয়। তারপর তাতে সিঁদুর দিয়ে সপরিবার দেবীপ্রতিমার ডান দিকে দাঁড় করিয়ে পুজো করা হয়। প্রচলিত ভাষায় নবপত্রিকার নাম কলাবউ।
নবপত্রিকার নয়টি উদ্ভিদ আসলে দেবী দুর্গার নয়টি বিশেষ রূপের প্রতীকরূপে কল্পনা করা হয়েছে।
কদলী গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী ব্রহ্মাণী। কচু গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী কালিকা। হরিদ্রা গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী উমা। জয়ন্তী গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী কার্তিকী। বিল্ব গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী শিবা।
দাড়িম্ব গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী রক্তদন্তিকা। অশোক গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী শোকরহিতা। মান গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী চামুণ্ডা। ধান গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী লক্ষ্মী।
এই নয় দেবী একত্রে “নবপত্রিকাবাসিনী নবদুর্গা” নামে নবপত্রিকাবাসিন্যৈ নবদুর্গায়ৈ নমঃ মন্ত্রে পূজিতা হন।
মহাসপ্তমীর দিন সকালে কোনও নদী বা কোনও জলাশয়ে (নদী বা জলাশয় না থাকলে কোনও মন্দিরে) নিয়ে যাওয়া হয়। পুরোহিত নিজেই কাঁধে করে নবপত্রিকা নিয়ে যান। তাঁর পিছন পিছন ঢাকিরা ঢাক বাজাতে বাজাতে এবং মহিলারা শঙ্খ ও উলুধ্বনি করতে করতে যান। শাস্ত্রবিধি অনুযায়ী স্নান করানোর পর নবপত্রিকাকে পরানো হয় নতুন শাড়ি। তারপর পুজোমণ্ডপে নিয়ে এসে দেবীর ডান দিকে একটি কাঠের সিংহাসনে স্থাপন করা হয়। পুজোমণ্ডপে নবপত্রিকা প্রবেশের মাধ্যমে দুর্গাপুজোর মূল অনুষ্ঠানটির প্রথাগত সূচনা হয়। নবপত্রিকা প্রবেশের পর দর্পণে মহাস্নান করানো হয় দেবীকে। এরপর বাকি দিনগুলিতে নবপত্রিকা প্রতিমাস্থ দেবদেবীদের সঙ্গেই পূজিত হতে থাকে।
উল্লেখ্য, মার্কণ্ডেয় পুরাণে নবপত্রিকার উল্লেখ নেই। কালিকাপুরাণে নবপত্রিকার উল্লেখ না থাকলেও, সপ্তমী তিথিতে পত্রিকাপুজোর নির্দেশ রয়েছে। কৃত্তিবাস ওঝা বিরচিত রামায়ণে রামচন্দ্র কর্তৃক নবপত্রিকা পুজোর উল্লেখ রয়েছে – “বাঁধিলা পত্রিকা নব বৃক্ষের বিলাস।”