৭১ তম স্বাধীনতা দিবসের ভোর থেকেই দিল্লির ঐতিহাসিক লালকেল্লায় ছিল সাজোসাজো রব। সকালেই হাজির হন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রীতি মেনে দেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। কথা বলেন দেশের ৩ সেনাপ্রধানের সঙ্গে। পরে লালকেল্লা থেকে ভাষণ দিতে গিয়ে এদিন কালো টাকা থেকে দুর্নীতি, কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক থেকে গোরক্ষপুরের শিশুমৃত্যু, কাশ্মীর থেকে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত, সবই একে একে উঠে এসেছে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। দেশে ধর্মের নামে হিংসা নিয়েও এদিন ফের একবার তাঁর কড়া অবস্থানের কথা জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সাফ জানিয়েছেন, ধর্মের নামে হিংসা কোনওমতেই বরদাস্ত করা হবে না। দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনও জায়গা নেই বলেও এদিন স্পষ্ট করে দেন তিনি।
নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করার জন্যও দেশবাসীকে অভিনন্দন জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি ও কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াই চলবে। দুর্নীতি রুখতে তাঁর সরকার কড়া ব্যবস্থা নেবে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাফল্যের কিছু খতিয়ান দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখনও পর্যন্ত দেশের ১ লক্ষ ৪৫ হাজার ভুয়ো সংস্থা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ২ লক্ষ কোটি টাকার কালো টাকার হদিস মিলেছে। ১৮ লক্ষ মানুষের আয়ের সঙ্গে কোনও সঙ্গতি খুঁজে পাওয়া যায়নি। ৮০০ কোটি টাকার বেআইনি সম্পত্তি উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি নতুন কর কাঠামো জিএসটি দেশে কোঅপারেটিভ ফেডারেলিজমকে সার্থক করেছে বলেও দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর দাবি, দেশে এখন সততার উৎসব চলছে।
কাশ্মীরকে অশান্ত করে রেখেছে কিছু মুষ্টিমেয় বিচ্ছিন্নতাবাদী। কাশ্মীর ইস্যুতে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দাবি এরাই হিংসা ছড়াচ্ছে। গুলি বা গালি নয়, ভালবাসা দিয়ে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করতে হবে। সন্ত্রাসবাদী শক্তিকে পরাস্ত করতে গোটা বিশ্ব ভারতের পাশে আছে বলে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী এদিন সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের কথা তুলে ধরেন। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ওই হানাই পরিস্কার করে দিয়েছে ভারতের শক্তি। কাশ্মীর নিয়ে মুখ খুললেও চিন বা ডোকলাম ইস্যু নিয়ে এদিন একটা কথাও বলেননি প্রধানমন্ত্রী।
কেন্দ্র রাজ্য সম্পর্ক নিয়ে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এদিন দাবি করেন আগে কেরোসিন, ইউরিয়া নিয়ে কেন্দ্র রাজ্য সংঘাত লেগে থাকত। এখন দিন বদলেছে। কেন্দ্রকে বড় ভাই আর রাজ্যকে ছোট ভাই বলে ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন এখন কেন্দ্র রাজ্য মিলেমিশে কাজ করছে। একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তিনি বলেন, একসময়ে তিনি নিজে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তাই ভাল জানেন দেশের উন্নয়নে রাজ্যের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি এদিন পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও অসমের নাম করে প্রধানমন্ত্রী বলেন দেশের এই ৩ রাজ্য প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ। এই ৩ রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে বলেও জানান তিনি।
গোরক্ষপুরে শিশু মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে এদিন শোকব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। মৃত শিশুদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি। সেইসঙ্গে সম্প্রতি প্রাকৃতিক দুর্যোগেও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এই অবস্থার সঙ্গে লড়তে সকলকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
দেশের উন্নয়নে একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার জন্য দেশবাসীকে আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। নতুন ভারত গঠনে যুব সমাজকে প্রযুক্তি ও শিক্ষায় আরও বেশি করে এগিয়ে আসার ডাক দেন তিনি। দেশের ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস ২০২২ সালে পালিত হবে। সেই বছরকে সামনে রেখে নতুন ভারত গড়ার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি জানান, যাঁরা এই শতাব্দীর শুরুতে জন্মগ্রহণ করেছে তাদের বয়স এখন ১৮ হতে চলেছে। এরাই দেশের ভাগ্য বিধাতা হবেন বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। চলছে, চলবে মানসিকতা ত্যাগ করে সকলকে এগিয়ে চলারও ডাক দেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিন লালকেল্লায় পতাকা উত্তোলনে আসার আগে রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সৌধে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রায় একঘণ্টার বক্তব্যের শেষে মিশে যান কচিকাঁচাদের ভিড়ে। হাত মেলান, আদর করেন তাদের। এদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন জন্মাষ্টমী উৎসব পালিত হচ্ছে। লালকেল্লাতেও বেশ কয়েকজন ছোটছোট ছেলেমেয়ে কৃষ্ণের সাজে বাসন্তী রংয়ের পোশাকে হাজির হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। তাদের সঙ্গে ছবিও তোলেন প্রধানমন্ত্রী। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ লালকেল্লা ছেড়ে বেরিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী।